রোবটিক্স! আগামী বিশ্বে রোবটের কর্তৃত্ব।
ধরুণ, আপনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। খুব মিস্টি একটা স্বপ্নে তলিয়ে আছেন, এমন সময় কোন একটা যন্ত্র আপনাকে ঘুম থেকে টেনে তুলে খাটে বসালো। আপনি বিরক্তি সহকারে মেশিনটির দিকে তাকাতেই মেশিনটি মনে করিয়ে দিলো, এটি একটি রোবট। আপনারই ক্রয়কৃত রোবট, যাকে আপনি গতরাতে শোয়ার আগে প্রোগ্রামে সেট করে দিয়েছেন যে, আপনাকে যেন সকাল ৬টা নাগাদ ঘুম থেকে তোলে দেয়া হয়। কারণ, আপনার ৮টায় অফিস।
আপনি ঘুম ঘুম চোখে খাটে বসে আছেন, রোবটটি আপনার সামনে টুথ ব্রাশ, টুথপেস্ট এবং গোসলের জন্য প্রয়োজনীয় কাপড় নিয়ে হাজির। আপনি বাথরুম থেকে গোসল সেরে বের হয়ে দেখলেন, খাবার টেবিলে আপনার নাস্তা হাজির। আপনি নাস্তা সেরে উঠে দাঁড়ানোর আগেই আপনার রোবট আপনার অফিসে যাওয়ার ড্রেস নিয়ে হাজির হয়ে আপনাকে পোশাক পরায় হেল্প করলো। আপনি লিফটে করে নেমে গেইটে যেতে যেতে আপনার রোবট আপনার গাড়ি ড্রাইভ করে আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে বের করে নিয়ে এসেছে। আপনি আপনার সিটে বসলেন, আপনার রোবটি আপনাকে শাঁই শাঁই ড্রাইভ করে নিয়ে যাচ্ছে অফিস বরাবর।
কি! অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? হতেই পারে, তবে রোবটিক্সের কল্যাণে সেই অবিশ্বাস্য ব্যাপারটাই খুব তাড়াতাড়ি আমাদের জীবনে সত্য হতে যাচ্ছে। হয়তো খুব বেশি দেরী নেই। আমাদের সবারই হয়তো পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে থাকবে এমন একটা আর্টিফিশিয়াল ইন্ট্যালিজেন্স বা রোবট। যা পরিচালিত হবে রোবটিক্সের সুদক্ষ প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে।
আমি জানি, আপনি এখন কল্পনা করছেন, তেমনি একটি পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট রোবটের। যা আপনার প্রতিটি কাজে সাহায্য সহযোগিতার পাশাপাশি আপনার দুঃসাধ্য যত কাজ তা করে দিবে চোখের পলকে। তাহলে আর দেরী কেন? চলুন রোবটের মালিক হওয়ার আগেই জেনে নিন, রোবট এবং রোবটিক্স সম্পর্কে বিস্তারিত।
রোবটিক্স কী?
রোবটিক্স হলো প্রযুক্তির এমন একটি শাখা যেখানে রোবট বা আর্টিফিশিয়াল ইন্ট্যালিজেন্স সমূহের ডিজাইন, নির্মাণ, কার্যক্রম, পরিচালনা, উন্নয়ন ও প্রয়োগ নিয়ে কাজ করা হয়। নিউ কলিগেইট ডিকশনারীর মতে “রোবট হচ্ছে একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা বা প্রক্রিয়া যা মানুষ যেভাবে কাজ করতে পারে সেভাবে কাজ করে অথবা এর কাজ দেখে মনে হয় এর বুদ্ধিমত্তা আছে।
আচ্ছা, সংজ্ঞায়নটা মনে হয় ততোটা বুঝার উপযোগী হয়নি। চিন্তার কিছু নেই, আমি সহজভাবে আলোচনা করছি, রোবটিক্স হলো বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যেখানে কম্পিউটারের একটি নির্দিষ্ট শাখাকে নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং এই শাখার কম্পিউটার নিয়নন্ত্রিত ডিভাইসগুলো নড়াচড়া করতে পারে, বাস্তব জগতের সাথে মিথিস্ক্রিয়া করতে পারে এবং এত কঠিন সব কাজ করতে পারে যা মানুষের পক্ষে অসম্ভব কিংবা ভয়াবহ ঝুঁকির কারণ।
অবাক লাগছে? মানুষ যা পারে না বা মানুষের পক্ষে যা অসম্ভব তা রোবট পারে? অবশ্যই পারে। উদাহরণ হিসেবে চিন্তা করলে- মানুষের পক্ষে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের একটি সেক্টর হচ্ছে ওয়াল্ডিং। এই ওয়াল্ডিং এর সময় এতো বেশি তাপের সৃষ্টি হয় যেখানে মানুষের পক্ষে টিকে থাকা অসম্ভব। অথচ রোবট সেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা এতো উচ্চ মানের তাপ সয়েও কাজ করে যেতে পারে অবলীলায়। এমন আরো অনেক উদাহরণ আছে। যেমন- গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধান, মহাকাশের গ্রহ উপগ্রহে গমন, মেরু অঞ্চলের বরফাঞ্চলে অভিযানসহ আরও আরও অনেক অনেক অসম্ভব কাজকে খুব সহজেই সম্ভব করছে রোবটিক্স।
রোবটিক্স শব্দের উৎপত্তি-
রোবোট (Robot) শব্দটার উৎপত্তি “Robota” মতান্তরে “roboti” শব্দ থেকে। শব্দটির প্রবক্তা ছিলেন ক্যারেল ক্যাপেক, যিনি বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে সাইন্স ফিকশন লেখার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। ‘Robota’ শব্দটার মানে হল দাস (slave) বা কর্মী (worker)।
এবং রোবটিক্স শব্দটি এসেছে ‘রোবট’ শব্দ হতে যা প্রবর্তিত হয় সেই চেক লেখক ও নাট্যকার কারেল কাপেক এর একটি নাটক থেকে যা ১৯২০ সালে প্রকাশিত হয়। শব্দটি এসেছে মূলত স্লাভিক শব্দ “রোবোটা” হতে যার অর্থ হলো শ্রমিক। অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি অনুযায়ী “রোবটিক্স” শব্দটি সর্বপ্রথম প্রিন্টে ব্যবহার হয় এর ছোট সায়েন্স ফিকশন গল্প “লায়ার” এ যা ১৯৪১ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।
রোবটিক্স এর ব্যবহারসমূহ-
- ম্যানুফ্যাকচারিং- বর্তমানে মিল ফ্যাক্টরিতে রোবটিক্সের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। আমরা অনেকেই ন্যাশনাল জিওগ্রাফি কিংবা ডিসকভারি চ্যানেলের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিডিওতে যে লম্বা হাতল যুক্ত মেশিনগুলো দেখতে পাই। যেগুলো তাদের লম্বা হাতের সাহায্যে গাড়ির পার্টগুলো খুব নিপুণভাবে সংযোজন করে, সেই মেশিনগুলোই হচ্ছে রোবট যা রোবটিক্সের প্রোগ্রামিং কোডের মাধ্যমে চলমান থাকে।
- বিপজ্জনককাজে- মানুষের জন্য যেসব কাজ বিপদজনক সেসব কাজ খুব সহজেই রোবট করতে পারে কোনো প্রকার ঝুঁকি ছাড়াই। যেমন- কোথাও বোম থাকার সংবাদ আসলে সেখানে মানুষের অবস্থান করা মারাত্নক ঝুঁকির কাজ অথচ রোবট সেখানে অনায়াসে কোন প্রকার ভয় পাওয়া ব্যতিতই অবস্থান করতে পারে এবং তাকে প্রদত্ত ইনপুট প্রোগ্রামের মাধ্যমে বোম রিফিউজড করে দিতে পারে।
- ভারীশিল্প কারখানায়- ভারী শিল্প কারখানা বলতে মূলত ইস্পাত, জাহাজ, নির্মাণ সামগ্রী, স্টিল, গাড়ি ইত্যাদিতে কিছু কিছু অংশে মানুষের প্রবেশ রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পরে। ফলে সেখানে রোবট পাঠানো হয়। সেখানে ব্যবহৃত রোবটগুলো অতি মাত্রায় তাপ সহনশীল। এবং রোবটের মৃত্যু ঝুঁকিও নেই।
- নিরাপত্তারকাজে- বর্তমানে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে রোবটের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের চেয়েও সিকিউরিটি সেক্টরে রোবট সাফল্য দেখাতে পারছে বহুগুণ। রাতের সিকিউরিটি ডিউটিতে মানুষের ডাকাত কিংবা ছিনতাইয়ে কবলে পড়ার ভয় থাকলেও রোবট এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিরাপদ। বুঝতে একটু কষ্ট হচ্ছে! সহজে বলি, ধরুণ আমরা প্রায়ই দেখতে পাই এটিএম বুথের সিকিউরিটি গার্ডদেরকে মারধর করে টাকা ছিনতাই হয়। অনেকে নিহতও হয়। তবে এক্ষেত্রে রোবট সিকিরিটিতে নিরাপাদ। এরা অনেকাংশেই ছিনতাইকারীদের প্রতিহত করতে পারে।
- চিকিৎসায়- বর্তমানে টেলিমেডিসিনে রোবটের ব্যবহার ঈর্ষণীয় সাফল্য প্রতিয়মাণ হয়েছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোবটিক্স বর্তমানে ইনজেকশান পুশ করা থেকে শুরু করে জটিল অপারেশন পর্যন্ত করতে সক্ষম হচ্ছে। এমনকি বিদেশে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ভিডিও কনফারেন্সে রোবটকে কমান্ড প্রদান করলে রোবট তা দেশের হসপিটালেই অপারেশন সম্পন্ন করতে পারছে। ফলে দেশে বসেই জটিল সব রোগের চিকিৎসা সম্ভবপর হচ্ছে এই রোবটিক্সের কল্যাণে।
- সামরিকক্ষেত্রে- বর্তমান সময়ে যুদ্ধক্ষেত্রেও রোবটের ব্যবহার আশানুরূপ সাড়া ফেলেছে। প্রাচীনকাল থেকেই যুদ্ধ বিগ্রহ মানেই লক্ষ কোটি প্রাণনাশের এক মহায়োজন। কিন্তু সম্প্রতি যুদ্ধক্ষেত্রে রোবটিক্স ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। যা মানুষের বিকল্প হিসেবে সবচেয়ে বড়ো সাফল্যগুলোর একটি বলে পরিগণিত হচ্ছে।
- মহাকাশগবেষণায়- বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় রোবটিক্স যোগ করেছে এক নতুন মাত্রা। মহাকাশ কিংবা গ্রহ, উপগ্রহে মানুষের অভিযানে ফিরে আসার সম্ভবনা একবারেই কম। কিন্তু মহাকাশসহ অক্সিজেন শূণ্য এমন পরিস্থিতিতেও রোবট টিকে থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত নিয়ে রোবট ফিরে আসতে পারে অনায়াসে।
- ঘরোয়াকাজে ও রেস্টুরেন্ট- ইতোমধ্যেই ঘরোয়া এবং রেস্টুরেন্ট এর কাজে রোবটের ব্যবহার শুরু হয়েছে। মানুষের চেয়েও কম সময়ে এরা খাবার পরিবেশনসহ ঘরোয়া যেকোনো কাজ করতে পারে খুব সহজে। ফলে এই সেক্টরের নির্ভরশীলতা রোবটিক্সের উপর বৃদ্ধি পাচ্ছে বহুগুণে।
রোবট এবং রোবটিক্স-এর মধ্যে পার্থক্য-
এতোক্ষণ পড়ে হয়তো রোবট এবং রোবটিক্সের মাঝে খুব একটা পার্থক্য করতে পারছেন না। তাহলে চলুন জেনে নেই, রোবট এবং রোবটিক্সের মাঝে পার্থক্য-
রোবট এবং রোবটিক্সের মাঝে পার্থক্যের বিষয়টি খুবই সুস্পষ্ট। রোবট হলো তৈরিকৃত বস্তু বা মেকানিজম। আর এই মেকানিজম নিয়ে যে শাখায় বিস্তর গবেষণা, উন্নয়ন, পরিবর্ধন, সংযোজন, বিয়োজন নিয়ে কাজ করা হয় তাকেই বলা হয় রোবটিক্স। রোবটিক্স আসলে আর্টিফিশিয়াল ইন্ট্যালিজেন্স এর একটি প্রায়োগিক শাখা। রোবটিক্সের সাথে মেকানিক্যাল, ইলেক্ট্রিক্যাল এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অর্থাৎ এই তিনটি ইঞ্জিনিয়ারিং সাইটের সমন্বিত আউটপুটই হচ্ছে রোবটিক্স বা আর্টিফিশিয়াল ইন্ট্যালিজেন্স। আর রোবটিক্স বা আর্টিফিশিয়াল ইন্ট্যালিজেন্স ব্যবহার করে যে প্রযুক্তিগুলো তৈরি করা হয় সেগুলোই রোবট।
নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে রোবটকে০৩ (তিন) ভাগে ভাগ করা যায় –
ম্যানুয়াল রোবট – এই ধরনের রোবটকে ম্যানুয়ালি অর্থাৎ আদেশ দানের মাধ্যমে চালানোর প্রয়োজন হয় । এগুলো নিজে নিজে কাজ করতে পারে না । ভারী ক্রেন হল ম্যানুয়াল রোবটের একটি ক্লাসিক উদাহরণ ।
সেমি অটোনোমাস রোবট – এগুলি এমন ধরণের রোবট যা ইউজার আগে থেকে কিছু কমান্ড দিয়ে রাখে এবং সে অনুযায়ী বাকি কাজ নিজেরাই সম্পাদন করে । এই ধরনের রোবটকে চালানোর জন্য ধাপে ধাপে ইন্সট্রাকশন দেওয়ার প্রয়োজন হয় না ।
অটোনোমাস রোবট – এই ধরণের রোবট, তাদের সমস্ত কাজ সম্পূর্ণরূপে নিজেরাই করতে সক্ষম । এই ধরণের রোবটগুলি সেন্সরের সাথে সংযুক্ত থাকে, যা মাইক্রো-কন্ট্রোলারের মাধ্যমে রোবটের গতিবিধি সনাক্ত করতে পারে এবং গাইড করতে পারে । ফায়ার ফাইটিং রোবট অটোনোমাস রোবটের একটি খুব ভাল উদাহরণ ।
যখন কোন রোবট তৈরি করা হয়, তখন বিভিন্ন কাজ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মেশিনের প্রয়োজন হয় এবং এটি নিম্লিখিত অংশ নিয়ে গঠিত –
- সেন্সর সিস্টেম:- আপনারা সবাই জানেন যে, আমাদের শরীরে ৫ টি ইন্দ্রিয় আছে, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের চারপাশের পরিবেশের সবকিছু দেখতে এবং অনুভব করতে পারি । রোবটের ক্ষেত্রে এগুলো করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সেন্সর রোবটের মধ্যে ইনস্টল করা হয় । এই সেন্সর গুলোর মাধ্যমে রোবট বুঝতে পারে যে, এটিকে কী নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে এবং সামনে কী ধরণের কাজ আসতে চলেছে । রোবটের ক্ষেত্রে আই সেন্সর, প্রেসার সেন্সর এবং সোনার সেন্সর ইত্যাদি ইউজ করা হয় । এগুলো ছাড়াও রোবটে অনেক ধরনের সেন্সর ব্যবহার করা হয়, যাতে এটি তার চারপাশের পরিবেশ খুব ভালভাবে অবজারভ করতে পারে ।
- স্ট্রাকচার বডি:-যে কোনো ধরনের রোবট নির্মাণ করার আগে, এর ভৌত গঠনের সম্পূর্ণ স্ট্রাকচার প্রস্তুত করতে হয় এবং পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী তার কাজের ক্ষেত্র বিবেচনা করে বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস বসানোর কাজ শুরু করা হয় ।
- পাওয়ার সোর্স:-মানুষের যেমন চলাফেরা বা টিকে থাকার জন্য শক্তির প্রয়োজন হয় তাই খাবার খায় তেমনি রোবটের চলাফেরা করার জন্যও শক্তির প্রয়োজন হয়। আর সেই শক্তি আসে ব্যাটার, সৌরশক্তি কিংবা জ্বালানী তেল থেকে।
- মাস্কুলার সিস্টেম: –একটি রোবট নির্মাণেও মাস্কুলার সিস্টেম ইউজ করা হয়, যাতে এটি সঠিকভাবে তার কাজগুলি সম্পাদন করতে পারে । এটা অনেকটা আমাদের দেহের গঠনের মতোন। কোন রোবট কোন কাজ করবে তা উপর ভিত্তি করে তার দেহের ডিজাইন করা হয়ে থাকে।
- ব্রেন সিস্টেম:- কাজ করার জন্য যেমন মানুষের মস্তিষ্কের প্রয়োজন হয় তেমনি রোবটেরও প্রয়োজন হয় জ্ঞানগর্ব দিক নির্দেশনার। রোবটের মস্তিষ্ক হলো ব্রেন এবং সে ব্রেনে তাকে কাজ করার জন্য দেয়া হয় যাবতীয় প্রোগ্রামিং কমান্ড।
রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের ক্ষেত্রসমূহ-
রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের ক্ষেত্রসমূহ দিন দিন বিস্তৃত আকার ধারণ করছে। রোবটিক্স এর কাজের ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞান, প্রোগ্রামিং, প্রযুক্তি ও ডিজাইন, মেকাট্রনিক্স এবং মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োঞ্জিনিয়ারিং, মোটর ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইলেকট্রনিক্স। এসকল বিষয়গুলোর যেকোনো একটি বিষয়ের কথা যদি আপনি চিন্তা করেন তবে দেখবেন দেশে বিদেশে এই সাবজেক্টগুলোর কদর সবার উপরে। এজন্য আপনি রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ার হতে পারলে মহাকাশ গভেষণা থেকে শুরু করে প্রোগ্রামিং যেকোনো সেক্টরে কাজ করতে পাবেন অনায়সে। এছাড়া বড়ো বড়ো টেক জায়ান্ট কোম্পানি যেমন- গুগল, ফেইসবুকসহ অসংখ্য গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে আপনার চাকুরি হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। এছাড়া একজন রোবটিক্স ইঞ্চিনিয়ার প্রোডাকশন সম্পর্কিত যেকোনো হাই প্রোফাইল কোম্পানিতে কাজ করা তো মামুলি ব্যাপার মাত্র।
এতোটুকু আলোচনা পড়ে আসলে রোবটিক্সের গুরুত্ব আর বুঝার বাকি থাকে না। তবুও রোবটিক্সের গুরুত্ব আলোচনা করতে গেলে বলতে হয় আগামী উন্নতবিশ্বে রোবট বা রোবটিক্স এক বিপ্লবের নাম। মানুষ মাত্রই চায় তার কাজটা সহজ হোক। সময় সাশ্রয় হোক। নিরাপদ হোক। সেক্ষেত্রে সে যে প্রযুক্তির সাহায্য নিতে পারে তা নিঃসন্দেহে রোবট। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, আগামী বিশ্বে রোবট হবে মানুষের একমাত্র কর্মচারী। বাজার করা থেকে শুরু করে শিল্প কারখানার কাজ সকল কিছুই মানুষ রোবটের সাহায্যে করিয়ে নিবে। এর এমনটা যদি হয় তবে আপনি হবেন ওনেকগুলো রোবটের মালিক। হা হা হা। আপনার হুকুমে তারা ছুটে বেড়াবে নাস্তা তৈরি থেকে শুরু করে,অফিসের কাজ পর্যন্ত।
বাংলা ওয়েব কনটেন্ট- ০২
গাড়ির মালিকদের ড্রাইভারদের নিরাপত্তাসহ যেসব বিষয় খেয়াল করা প্রয়োজন
গাড়ি ও ড্রাইভারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আপনার করণীয়
আপনার একটি গাড়ি আছে। আপনি ভাগ্যবান। তবে এখন আপনার উপর অনেক দায়িত্ব। এতো টাকার গাড়ি তার উপর গাড়িটা শখের। সব মিলিয়ে গাড়িটা আপনার মনের অনেক বড়ো একটা জায়গা দখল করে আছে আনমনে। তাই গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আপনার একাধারে দায়িত্ব এবং কর্তব্যও। আজকের আলোচনায় মূলত আমরা গাড়ি এবং গাড়ির ড্রাইভার উভয়েরই নিরাপত্তা বিধান সম্পর্কে খুব সহজ এবং সাবলীল ভাষায় আলোচনা করার চেষ্টা করবো। আশা করি, আজকের আলোচনা এক ঝলকে পুরোটা পড়ে নিলে আপনি, আপনার গাড়ি এবং গাড়ির ড্রাইভারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন খুব সহজেই।
আমরা সচরাচর গাড়ির প্রতি খুব যত্নশীল হলেও ড্রাইভারের প্রতি চরম উদাসীন। অথচ একবারের জন্য হলেও আমাদের চিন্তা করা উচিত ড্রাইভার যখন গাড়ি ড্রাইভ করে তখন তার একটু বেখেয়াল বয়ে আনতে পারে আমাদের জীবনে ভয়াবহ কালো অধ্যায়। তাই গাড়ির পাশাপাশি গাড়ির ড্রাইভারের প্রতিও আমাদের যত্নের একটুও কমতি না হোক আর।
চলুন গাড়ি ও গাড়ির ড্রাইভারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জেনে নেই কিছু দরকারী টিপস এন্ড ট্রিকস-
- অভিজ্ঞ ড্রাইভার নিয়োগ- এতো দামি গাড়ি তার উপর শখ। তারও উপর আপনার এবং আপনার পরিবারের জীবন মরণের প্রশ্ন যেখানে, সেখানে আপনি অভিজ্ঞ ড্রাইভার নিয়োগ দিবেন সেটা জানা কথা। তবে অনেকেই অভিজ্ঞ ড্রাইভারের বেতন চাহিদা বেশি হওয়ায় কম টাকায় ড্রাইভার খুঁজে এবং নিয়োগ দেন। ফলে সড়কে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। তাছাড়া রাস্তা যেভাবে দিনদিন মৃত্যুকূপে পরিণত হচ্ছে সে হিসেবে অভিজ্ঞ ড্রাইভারে বিকল্প তো চিন্তা করা যায় না। গবেষণায় দেখা গেছে, সড়কে দূর্ঘটনার অন্যতম কারণ অনভিজ্ঞ ড্রাইভার, তাদের বেপরোয়া গতি, সড়ক আইন না মানাসহ এমন অসংখ্য কারণ। তাই যেখানে জীবন মরণের প্রশ্ন, সেখানে অভিজ্ঞ ড্রাইভার নিয়োগ করার ক্ষেত্রে কোন কমপ্রমাইজ না চলুক প্লিজ।
- গাড়ির ড্রাইভারের হ্যান্ডসাম স্যালারি- বলা হয়, “টাকা হচ্ছে মানুষের মনের মহাঔষধ” আপনার এতো দামি গাড়ি তারচেয়েও বড়ো কথা হচ্ছে এই গাড়িতে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করেন আপনি এবং আপনার পরিবার। তাই আপনাদের নিরাপত্তার স্বার্থে অবশ্যই যথেষ্ট পারদর্শী এবং চনমনে ড্রাইভার নিয়োগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পারদর্শী এবং যথাযথ ট্রেনিং প্রাপ্ত ড্রাইভারের চাহিদা একটু বেশি হবে, তবে তার অভিজ্ঞতার উছিলায় আপনি হয়তো বেঁচে যেতে পারেন ভয়ঙ্কর দূর্ঘটনা থেকে। আপনার জীবনের চেয়ে যেহেতু আর কোন কিছুই দামি হতে পারে না। তাই গাড়ির ড্রাইভারের হ্যান্ড স্যালারি এবং অভিজ্ঞ ড্রাইভার নিয়োগ করার ক্ষেত্রে এক চুলও ছাড় না থাকুক।
- ড্রাইভারের পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা- ড্রাইভারদের ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন ড্রাইভার যখন ড্রাইভ করেন তখন তার একই সাথে গাড়ির স্টেয়ারিং, ব্রেক, এক্সলেটর, ক্লাস, লুকিং গ্লাসসহ আরও অনেকগুলো বিষয়ের উপর খুব সূক্ষ্ণ নজরদারি রাখতে হয়। আর পর্যাপ্ত ঘুম না হলে কখনোই এতোগুলো বিষয়ের উপর মনোযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আপনি আপনার অবস্থান থেকে আপনার ড্রাইভার সঠিক সময়ে ঘুমুচ্ছে কিনা সে বিষয়ে কড়া হুশিয়ারি প্রদান করে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে আপনার বাসার গ্যারেজেই তার আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।
- সময় মতো স্যালারি প্রদান- দেখুন, আপনি আমি আমরা সকলেই কিন্তু কাজ করি টাকার জন্য। প্রত্যেক মানুষের জীবনেই টাকা অবিচ্ছেদ্য অংশ। যাদের যথেষ্ট টাকা আছে তাদের মাসের প্রথম কিংবা মাসের শেষ কোনটাই চিন্তা করতে হয় না। কিন্তু যারা অল্প বেতনের কর্মচারী তাদের সামান্য টাকা থেকে খাবার, সন্তানদের স্কুলের বেতনসহ অনেক অনেক খরচ মেটাতে হয়। তাই তাদের মাসের প্রথম মানে প্রথমই। কারণ তখন তাদের অনেকগুলো বিষয়ের উপর খরচের হিসাব নিকাশ করতে হয়। তাই চেষ্টা করুন, ড্রাইভারের বেতন মাসের প্রথম দিকেই প্রদান করে দিতে। দেখবেন সময় মতো বেতন পেলে তার মন থাকবে চনমনে, তখন সে চাইলেও দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ হতে পারবে না। এবং আপনার গাড়ি এবং আপনার প্রতি থাকবে তার আলাদা নজরদারি।
- নেশা করে কিনা খেয়াল রাখা- বর্তমানে অধিকাংশ ড্রাইভারই নেশার সাথে জড়িত। নেশাগ্রস্থ মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। তাই নেশাগ্রস্ত ড্রাইভারের হাতে কখনোই নিজের গাড়ি এবং প্রাণ দুটোর কোনটিই তোলে দেয়া যাবে না। খুব সচেতন ভাবে ড্রাইভার নির্বাচন করতে হবে এবং প্রতিটি মুহুর্তে খেয়াল রাখতে হবে সে নেশায় আচ্ছন্ন কিনা কিংবা নেশার ঘোরে অস্বাভাবিক কোন আচরণ করছে কিনা। বিষয়টি একটু অস্বস্তিকর হলেও আপনার এবং আপনার শখের গাড়ির নিরাপত্তায় কাজটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
- গাড়ির সিটবেল্ট- ড্রাইভারের নিরাপত্তায় সিটবেল্ট একটি অত্যাবশকীয় বিষয়। দূর্ঘটনায় পতিত হলে সিটবেল্ট ড্রাইভার এবং যাত্রীর জন্য অনেক বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। তাই গাড়ি চলমান থাকাবস্থায় সর্বদাই নিজের এবং ড্রাইভারের সিটবেল্ট বাঁধা আছে কিনা তা নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি।
- এয়ারব্যাগ- অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনায় ড্রাইভার এবং যাত্রীর ক্ষতি অনেকাংশেই কমাতে পারে এয়ার ব্যাগ। এয়ার ব্যাগ সিটবেল্টের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। ফলে আপনি সিটবেল্ট পরা থাকলে গাড়ির সামনের অংশে অস্বাভাবিক আঘাত আসলে গাড়ির স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম অটোমেটিক্যালি এয়ার ব্যাগ লাউঞ্চ করতে পারে। ফলে দেহের মূল্যবান অংশ মাথা, চোয়াল, মুখ এবং বুক এয়ারে ব্যাগে আঘাত করে ক্ষতির হাত থেকে অনেকটাই রক্ষা পেতে পারে।
- গাড়ির এন্টিব্রেকিং সিস্টেম- অনেকসময় অনাকাঙ্খিতভাবে গাড়ির চাকা লক হয়ে যায়। ফলে গাড়ি ধুমড়ে মুচড়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। আবার গাড়ির চাকা এডজাস্ট হয়ে ভয়াবহ দূর্ঘটনার সৃষ্টি হতে পারে। এমন ভয়াবহ দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে আপনার প্রয়োজন গাড়ির এন্টিব্রেকিং সিস্টেম নিয়মিত পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা। এতে আপনার গাড়ি এবং গাড়িতে অবস্থান করা সকলেই ভয়াবহ বিপদ থেকে মুক্তি পাবেন অনেকাংশেই। যেহেতু দূর্ঘটনার পূর্ব কোন লক্ষণ থাকে না তাই আগে থেকেই সচেতন থাকাটাই দূর্ঘটনা মোকাবিলা করার কার্যকর মাধ্যম।
- প্রহরী ভেহিক্যাল ট্রেকিং সিস্টেম- ভেহিক্যাল ট্রেকিং এখন একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রহরী ভেহিক্যালে আছে ২০ টিরও বেশি ফিচার। যেগুলো আপনার গাড়ির গতিবিধি, গাড়ির অবস্থানসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য নিশ্চিত করবে আপনার মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই। তাই গাড়ির এবং গাড়ির ড্রাইভারের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রহরী ভেহিক্যাল ট্রেকিং সিস্টেম হোক আপনার গাড়ি ও গাড়ির ড্রাইভারের নিরাপত্তার প্রধান হাতিয়ার।
উপরোক্ত আলোচ্য বিষয়ের আলোকে আপনি খুব সহজেই আপনার গাড়ি ও গাড়ির ড্রাইভারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন খুব সহজেই। আপনার যাত্রা নিরাপদ হোক সবসময়ই। সেই কামনাই সতত…..
তথ্যসূত্র-
১. যুগান্তর
২. সময় নিউজ ডট টিভি
৩. টেকনোলজি টুডে
৪. প্রহরী
৫. টেকশপ বিডি
বাংলা ওয়েব কনটেন্ট- ০৩
নতুন পণ্য বাজারে আনতে অনুসরণ করুন এই ১০ টি ধাপ
নতুন পণ্য বাজারে আনতে হলে বেশ কিছু বিষয় যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যেহেতু, ব্যবসা মানেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তাই নতুন পণ্য বাজারে আনার ক্ষেত্রে তার চাহিদা, যোগান, মূল্য, স্থায়ীত্ব জেনে বুঝে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যেতে হয়। একটি পণ্যের বাজার ধরতে গিয়ে অধিকাংশ সময়ই কোম্পানিকে মোটা অঙ্কের টাকা লোকসান গুণতে হয়, তার মানে এই নয় যে, পণ্যটি লস প্রজেক্ট। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এগুতে পারলে প্রাথমিক ধাপে লোকসান গুণে হলেও শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট ভালো অঙ্কের মুনাফা অর্জন করা সম্ভবপর হয়। তাই পণ্য বাজারে আনতে হলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যাচাই বাছাই করা একান্ত জরুরি।
কী পয়েন্টস-
১. পণ্যের চাহিদা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ নতুন পণ্য বাজারে আনার প্রথম পদক্ষেপ।
২. একই পণ্য কোন কোন কোম্পানি ইতোমধ্যে বাজারে এনেছে তা জেনে সিদ্ধান্ত নেয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ।
৩. পণ্য উৎপাদনে সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ উৎপাদন ব্যয়, তাই উৎপাদন ব্যয় কমানো যায় এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে একেবারে প্রথমেই।
৪. কাঁচামাল সংগ্রহ করার সবচেয়ে সহজলভ্য পথ খুঁজে বের করতে হবে একেবারেই প্রথম ধাপেই।
৫. বাজারে টিকে থাকার জন্য চটকদার বিজ্ঞাপন, ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে প্রলোভন, দক্ষ পরিবেশক নিয়োগ ব্যবসায়ে সফল হওয়ার পূর্বশর্ত।
নতুন ব্যবসা করতে চাইলে ঐ ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান থাকাটা খুবই জরুরি। যে বিষয়গুলো না জানলেই নয়। সে বিষয়গুলো নিয়েই আজকের আলোচনা।
প্রাথমিক যে বিষয়গুলো না জানলে ব্যবসায় সফল হতে পারা যাবে না সে বিষয়গুলো খুব সহজে শিখে নিন এই আলোচনায়। তবে নতুন ব্যবসা দাঁড় করাতে যে কাজগুলো করতেই হবে সেগুলো বিচার, বিশ্লেষণ করে নিতে হবে নিজের অর্জিত অভিজ্ঞতার সাথেও। চলুন জেনে নেয়া যাক নতুন পণ্য বাজারে আনতে অবশ্যই অনুসরণীয় ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
(১) পরিকল্পনা- কোন একটি পণ্য উৎপাদন করার পূর্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে পরিকল্পনা। আপনি কোন ধরণের ব্যবসা করতে আগ্রহী। সেই পণ্য কিভাবে উৎপাদন করবেন। কারা হবে সে পণ্যের ভোক্তা। কাঁচামালের যোগান আসবে কোথা থেকে। যেদেশে ব্যবসা করবেন সেদেশে এর অন্যান্য সরবরাহকারী কারা। পণ্যটির চাহিদার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ চাহিদার আনুমানিক অবস্থা ইত্যাদি হবে আপনার পরিকল্পনার মূল অংশ। মনে রাখবেন, উত্তম পরিকল্পনা ব্যতিত ব্যবসায় সফল হওয়া অসম্ভব।
(২) বাজার যাচাই- বাজার যাচাই ছাড়া পণ্য তৈরি করা মাঝিবিহীন নৌকোর মতো। তাই পরিকল্পনার পরপরই আপনাকে সবার আগে সম্ভাব্য পণ্যটির বাজার যাচাই করতে হবে। এই বাজার যাচাইয়ের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ভোক্তা নির্বাচন। কেননা এর উপরই একটি পণ্য উৎপাদনের মূল পরিকল্পনা কী হবে তা নির্ভর করে। যদি ভোক্তা হয় শিশু তবে তা শিশু সুলভ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ডিজাইন ও পরিকল্পনা করে তৈরি করার প্রসেসে যেতে হবে। আবার এই শিশুদেরও ক্লাস বা শ্রেণি মাথায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। যদি এমন হয় পণ্যের টার্গেটে থাকা শিশুরা অধিকাংশই রিচ কিড তবে পণ্যের ডিজাইন এবং কাচামালে দামী পণ্য এবং গুণগত মানে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে হবে।
(৩) লাইফ টাইম- লাইফ টাইম বা ব্যবহার সীমা হচ্ছে পণ্যটি কত সময় ধরে ভোক্তার অধীনে ব্যবহার্য্য হিসেবে থাকবে। তাই লাইফ টাইম ভেবে পরিকল্পনা করতে হবে। একটি পণ্য সচরাচর কত সময় ধরে ব্যবহার করা হবে সেটির উপর নির্ভর করে পণ্যটির কাঠামো এবং কাঠামোর কাচাঁমাল বাছাই করতে হবে। এমন যদি হয়, পণ্যটি একটি খেলনা গাড়ি তবে এতে নিম্নমানের প্লাস্টিক ব্যবহার করা হবে। কিন্তু যদি পণ্যটি হয় রিমোট কন্ট্রোল কার তবে সে পণ্যের কাচাঁমাল হবে তুলনামূলক উন্নত প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম, কপার ও সংশ্লিষ্ট ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের সমন্বয়।
(৪) পণ্যটির সার্ভিস ক্ষমতা- একটি পণ্য মূলত কী কাজের জন্য তৈরি করা হবে তার উপর পণ্যের গঠন অনেকাংশে নির্ভর করে। যেমন- মিনারেল ওয়াটারের বোলত সাময়িক সময়ের জন্য হওয়ায় তুলনামূলক নমনীয় এবং হালকা ধাচের প্লাস্টিক কাচাঁমাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে কোমল পানীয়, জুস, ভিনেগার, টয়লেটিজ প্রোডাক্টের বোতল তৈরিতে ভালো এবং তুলনামূলক দৃঢ় প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। যার লাইফ টাইমও মিনারেল ওয়াটারের বোতলের চেয়ে বহুগুণ বেশি। তাই আপনি যে পণ্যটি তৈরি করবেন, তার সার্ভিস ক্ষমতা জেনে সে অনুযায়ী কাঁচামাল ব্যবহার করবেন। না হয়, পণ্যের সার্ভিস ক্ষমতা কমে গেলে, আপনি আপনার পণ্যের বাজার হারাবেন।
(৫) উৎপাদন ব্যয় ও পণ্যের চাহিদার সমন্বয়- একটি পণ্য ভোক্তার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য ভোক্তার প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে পণ্যটির মূল্য এবং প্রয়োজনীয়তার একটি সমন্বয় সাধন করতে হয়। পণ্যের প্রয়োজনীয়তা ও পণ্যের মূল্যের অনুপাত সমান বা কাছাকাছি না হলে পণ্যটি তার বাজার হারায় আবার পণ্যের প্রয়োজনীয়তার তুলনায় মূল্য অতিরিক্ত কম হলে পণ্যটির অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলাসহ পণ্যটি তার গ্রহণযোগ্যতা হারায়। ফলে উৎপাদন ব্যয় ও পণ্যের চাহিদার সমন্বয় না থাকলে উক্ত পণ্যটি লস প্রজেক্টে পরিণত হয়। তাই আপনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে, আপনি কাঁচামাল কোথা হতে সবচেয়ে কমে কিনতে পারবেন, উৎপাদন শ্রমিক কত কম মুজুরি বা কম শ্রমিক ব্যবহারে অধিক উৎপাদন করতে পারবেন। আপনি চাইলে ডিজিটাল মেশিনেরও সাহায্য নিতে পারেন।
(৬) পণ্য উৎপাদন- পণ্য উৎপাদনে যত কম সময়, কাচাঁমাল এবং শ্রমিক ব্যবহার করা যায় ততোই পণ্যের উৎপাদন খরচ কমিয়া আনা সম্ভবপর হয়। তাই আপনাকে পণ্য উৎপাদনের সময়টাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে উৎপাদন ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে যেন পণ্যের মানের কোন তারতম্য না হয়। পণ্য উৎপাদনে মানের দিকটা বজায় রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মানহীন পণ্য কখনোই ব্যবসাকে সফল করতে পারে না।
(৭) মান যাচাই- পণ্যটির উৎপাদন সম্পন্ন হলেই এর মান যাচাই করতে হয়। দেশভেদে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মান যাচাইয়ের দায়িত্ব পালন করে থাকে। যেমন- বাংলাদেশে বিএসটিআই। এছাড়া আর্ন্তজাতিক পর্যায়েও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা মান যাচাইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনার পণ্যটি উৎপাদনের পরপরই সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে মান যাচাই পূর্বক সনদ সংগ্রহ করতে হবে। না হয় বাণ্যিজিক উৎপাদনে গেলে তা অবৈধ বলে গণ্য হবে। আপনি মামলাও খেতে পারেন।
(৮) প্যাকিজিং- পণ্য উৎপাদন শেষে যত দ্রুত সম্ভব প্যাকিজিং করতে হবে। প্যাকেটের ডিজাইন খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভোক্তাকে আকৃষ্ট করার জন্য পণ্য সংশ্লিষ্ট রঙিন ডিজাইন করিয়ে নিবেন। যেন প্যাকেট দেখেই ভোক্তা পণ্য কিনতে আকৃষ্ট হয়। প্যাকেটে পণ্য সংশ্লিষ্ট তথ্যসমূহ, মান যাচাই সার্টিফিকেট, মেয়াদ সংশ্লিষ্ট তথ্য দিতে ভুলবেন না যেনো!
(৯) বিপণণ- এবার আপনাকে করতে হবে, সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজটা। পণ্য ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে না পারলে বাজারে টিকে থাকা অসম্ভব তা পণ্যটি যত গুণগত মানেরই হোক। তাই পণ্য ভোক্তা বরাবর পৌঁছাতে আপনাকে সুদক্ষ পরিবেশক নিয়োগ করতে হবে। খুচরা এবং পাইকারি বিক্রেতাদেরকে আপনার পণ্য বিক্রিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। প্রথম অবস্থায় নিজের লাভের অংশ সীমিত হারে রাখতে হবে। শহর এবং গ্রাম দুটোকেই টার্গেটে নিতে হবে।
(১০) মান ধরে রাখা- শুধু পণ্য উৎপাদন এবং বাজারজাত করলেই হবে না। যে বিষয়টি আপনাকে সবসময় মাথায় রাখতে হবে সেটি হচ্ছে, পণ্যেও গুণগত মান বজায় রাখা এবং দিনদিন পণ্যের মান উন্নত করা, নিত্যনতুন সংযোজন এবং প্রয়োজনে বিয়োজন করা। বাজারে টিকে থাকতে হলে আপনার প্রতিযোগীদের বাজার অবস্থাও আপনার মাথায় রাখতে হবে কিন্তু।
এইতো শিখে নিলেন, নতুন পণ্য বাজারে আনার ১০ টি অবশ্যই মাথায় রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ টিপস। তবে আরও কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে আপনার। ব্যবসায়িক অনুষদের অধ্যাপক দীপক চন্দ্র জৈন এর মতে, “ পর্যাপ্ত বিপণণ জ্ঞান, যথেষ্ট অর্থসংস্থান, সময়জ্ঞান, কারিগরি দক্ষতা, সাংগঠনিক মান ও পরিবেশগত ব্যর্থতা” এই ছয়টি বিষয়ের অভাবে অধিকাংশ পণ্য বিপুল পরিমাণ লোকসান গুণে বাজার থেকে বিদায় নেয়। তাই আপনাকে এই ছয়টি বিষয় আয়ত্ত¡ এবং গভীর জ্ঞান অর্জন করা ছাড়া ব্যবসায়ে ইনভেস্ট করতে অবশ্যই না করবো। কেননা ইউকিপিডিয়ার তথ্য মতে, নতুন পণ্যের ২৫-৪৫ শতাংশ পণ্যই বাজারে টিকতে পারে না, কারিগরি দক্ষতা, পর্যাপ্ত বিপণন জ্ঞান ও অর্থসংস্থানের অভাবে।
তাই আপনাকে উপরোক্ত আলোচ্য বিষয়গুলো ভালোভাবে অনুধাবন করেই ব্যবসায় নামতে হবে। যদি আপনি ব্যবসায় সফল হতে চান।
তথ্যসূত্র-
Jonathan Law, সম্পাদক (২০১৬)। A Dictionary of Business and Management (৬ষ্ঠ সংস্করণ)। Oxford University Press।
↑ Nadia Bhuiyan (২০১১), “A framework for successful new product development”, Journal of Industrial Engineering and Management, 4 (4): 746-770
Northeastern University। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০২১
Edwin Booz; James Allen; Carl Hamilton (১৯৮২), New product management for the 1980s, New York: Booz, Allen & Hamilton, Inc.
↑ Dipak Jain (২০০১), “Managing new product development for strategic competitive advantage”, D. Iacobucci, Kellogg on marketing, পৃষ্ঠা 130-150
বাংলা ওয়েব কনটেন্ট- ০৪
আপনার গন্তব্যে দ্রুততম সময়ে পৌঁছানোর উপায়
আপনার গন্তব্যে দ্রুততম সময়ে পৌঁছানোর উপায়
গন্তব্যে দ্রুততম সময়ে পৌঁছানো সবারই অন্যতম লক্ষ্য হলেও বেশকিছু বিষয় মাথায় না রেখে আমরা বেরিয়ে পড়ার কারণে আমরা আমাদের কাঙ্খিত গন্তব্যে যথাসময় তো দূরের কথা অনেক বেশি দেরী করে ফেলি। ফলে আমাদের পরিকল্পনার অনেক কিছুই ভেস্তে যায়। সঠিক পরিকল্পনা এবং বেশকিছু পদ্ধতি অবলম্ভন করে আমরা চাইলেই আমাদের গন্তব্যে দ্রুততম সময়ে পৌঁছে যেতে পারি খুব সহজেই।
আজকের আলোচনায় আমরা মূলত এমন কিছু কার্যকরী টিপস আপনাদের সাথে শেয়ার করবো যা অনুসরণ করে আপনি দ্রুততম সময়ে পৌঁছে যেতে পারবেন আপনার কাঙ্খিত গন্তব্যে। তবে চলুন জেনে নেয়া যাক গন্তব্যে দ্রুততম সময়ে পৌঁছে যাওয়ার কিছু সিক্রেট টিপস-
- কোথায় যাবেন- আপনার গন্তব্য কোথায় সেটা অবশ্যই ইতোমধ্যে ঠিক করে ফেলেছেন। তবে যদি গন্তব্য পরিবর্তনীয় হয় তবে খুব ভেবেচিন্তে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি এমুহুর্তে কোথায় যেতে চান। যদি একই সাথে আপনার দুটো জায়গায় যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় তবে আপনি কোন গন্তব্য থেকে দ্রুত সময়ে ফিরে আসতে পারবেন সেটাকে প্রাধান্য দিবেন। তাছাড়া আপনার জার্নি করার সময়টা কখন এবং সে সময়ে সড়কে যান চলাচলের মাত্রা কেমন, যানজটের সৃষ্টি হতে পারে কিনা সে বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে আপনাকে স্থান নির্বাচন করতে হবে।
- কখন যাবেন- ধরুণ, আপনি ঠিক করেছেন ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাবেন। এখন আপনার বাসা যদি হয় উত্তরা তবে আপনি উত্তরা থেকে দিনের বেলা কাঁচপুর আসতে আসতেই কক্সবাজার যাওয়ার আনন্দ মিটে যাবে। আবার আপনি যদি কুয়াকাটা যেতে চান তবে আপনি দিনে না গিয়ে রাতের লঞ্চে ঘুমিয়ে চলে যেতে পারবেন। সকালে উঠে দেখবেন আপনি কুয়াকাটা পৌঁছে গেছেন প্রায়। তাই আপনি কখন রওয়ান দিবেন মানে কখন যাবেন সেটা খুব ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই জার্নি করার পরিকল্পনার জায়গাটাতেই সকলে ভুল করে তাই কখন যাবেন সেটা খুব ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েই রওয়ানা করতে হবে।
- কিভাবে যাবেন- আপনি যেখানে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত স্থির করেছেন সেখানে যাওয়ার জন্য অনেকগুলো পদ্ধতি আপনি চাইলে অবলম্ভন করতে পারেন। যেমন ধরুণ, বাসে যাবেন নাকি ট্রেনে, বিমানে না লঞ্চে, সকালে যাবেন নাকি রাতে। আপনি আসলে কিভাবে যেতে চান সেটার উপরে অনেকাংশেই নির্ভর করবে গন্তব্যে দ্রুততম সময়ে পৌঁছানোরে কৌশল। তাই নিজের বাজেটের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিন কোন মাধ্যমে আপনি দ্রুত পৌঁছাতে চান।
- অর্থ নাকি সময়- পৃথিবীতে মূলত দু’ধরণের মানুষের বসবাস। এক শ্রেণির অর্থ আছে সময় নাই এবং অপর শ্রেণির পর্যাপ্ত সময় আছে কিন্তু অর্থ নাই। আপনার নিঃসন্দেহে অর্থ আছে কিন্তু সময় নাই। তাই আপনাকে আসলে সময়ের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যেভাবে হলে আপনার সময় রক্ষা পাবে এবং সময় মতো পৌঁছাতে পারবেন সেটার উপরই আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাই যখনি আপনি কোথাও দ্রুততম সময়ে পৌঁছাতে চাইবেন, তখন খুব ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিবেন কোন মাধ্যমে আপনার দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব হবে। যেমন- ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম যদি আপনি বাসে যান তবে কমপক্ষে ০৭ ঘন্টা সময় লাগবে আপনার। আর যদি আপনি ফ্লাইটে যান তবে আপনার সময় লাগবে বড়োজোড় আধাঘন্টা। তাই সিদ্ধান্ত আপনার সময় না অর্থ কোনটাকে প্রাধান্য দিবেন।
- সকালে না রাতে- জার্নির মোক্ষম সময় মূলত দুইটি। সকাল এবং রাত। আপনি যদি রাতে জার্নি করেন তবে সেটা সবচেয়ে ভালো কেননা ঘুমিয়েই জার্নির ধকল অনেকটা কাটিয়ে উঠা যায়। তবে চাইলেই রাতে জার্নি করাটা নিরাপদ না। রাতের গাড়িতে ড্রাইভার ঘুমিয়ে গেলে এক্সিডেন্ট হওয়ার ভয় আছে, যদিও বিষয়টা হাস্যকর শুনাচ্ছে তবে ভয়ের কিছু নেই এমন ঘটনা অতোটা ঘটে না। তবে রাতে ডাকাতের কবলে পড়ার ভয় আছে। তাই আপনি ভ্রমণ করতে চাইলে রাতে রওয়ানা করবেন নাকি খুব ভোরে সেটা ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন।
- গাড়ির ক্ষেত্রে প্রস্তুতি- যদি নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ভ্রমণ করতে চান তবে গাড়ির ক্ষেত্রে কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে জার্নি শুরু করার আগেই। চলুন সেই প্রস্তুতিগুলোও জেনে নেই অল্প কথায়…………………
- গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল চেক- দূরবর্তী জার্নিতে গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল চেক করা গুরুত্বপূর্ণ। না হয় মাঝপথে গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অত্যধিক।
- চাকার প্রেসার চেক- দ্রুতসময়ে পৌঁছাতে হলে চাকায় নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রেসার থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। সেটা অবশ্যই আগে থেকে চেক করে মাত্রা অনুযায়ী হাওয়া নিশ্চিত করে নিতে হবে।
- গাড়িতে পর্যাপ্ত জ্বালানী নিশ্চিত- জার্নিতে পর্যাপ্ত জ্বালানী নিশ্চিত করতে হবে। এমন হওয়াটা স্বাভাবিক যে রাস্তায় আপনি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সে রাস্তায় যদি আপনার গাড়ির জ্বালানী ফুরিয়ে যায় তবে জ্বালানি পাবেন না, তখন বিপাকে পড়তে হবে।
- গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র- গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে রাখাটা অত্যন্ত আবশ্যক একটি বিষয়। হয়রানি ব্যতিত দ্রুততম সময়ে কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছাতে সঠিক কাগজপত্র সাথে রাখার বিকল্প নেই।
- ড্রাইভারের পর্যাপ্ত ঘুম এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত- গন্তব্যে দ্রুততম সময়ে পৌঁছাতে হলে ড্রাইভারের সুস্বাস্থ্য অতীব জরুরি বিষয়। জার্নি শুরু করার আগে ড্রাইভারের পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করাটা খুবই দরকারী। রাস্তায় অধিকাংশ দূর্ঘটনা ঘটার পেছনে ড্রাইভারের অসুস্থতা কিংবা ঘুম চোখে গাড়ি চালানো অনেক বেশি দায়ী।
- হোমমেড খাবার সাথে রাখা- জার্নিতে আমাদের ক্ষুধা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি লাগাটা স্বাভাবিক। তাছাড়া রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে খাবার খাওয়াটা অনেক বেশি সময় এবং খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই জার্নির প্রস্তুতিতে এবং কাঙ্খিত গন্তব্যে দ্রুত সময়ে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সাথে রাখুন হোমমেড খাবার। কী কী হোমমেড খাবার সাথে রাখতে পারেন তা নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন…………………………….. এই লিংকে।
- বাকি সদস্যদের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়া- যদি এমন হয় আপনার সাথে বাচ্চা কিংবা বয়স্ক কেউ জার্নি করছে তবে তাদের সুস্থতার কথা মাথায় রেখে আপনাকে কিছু বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। যেমন ধরুণ, তাদের জন্য এ্যাসিডিটি এবং বমির ওষধ সাথে রাখা, গাড়িতে পর্যাপ্ত আলো, বাতাস কিংবা এসির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা। তাদের খাবারের বিষয়টিও আপনাকে মাথায় রাখতে হবে খুব সচেতনভাবে।
ব্যাস।। এইতো জেনে নিলেন আপনার গন্তব্যে দ্রুততম সময়ে পৌঁছানোর সহজ উপায় সমূহ। যাক। এবার আপনার যাত্রা শুভ হোক।
বাংলা ওয়েব কনটেন্ট- ০৫
চালকবিহীন গাড়ি ! আগামী বিশ্বে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির দাপুটে পদার্পণ।
স্বয়ংক্রিয় গাড়ি কী?
ধরুণ, আপনি বিলাসবহুল দামি কোন গাড়িতে বসে আছেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিণ যন্ত্রের কল্যাণে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় আপনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। স্বভাববশতঃ ড্রাইভারকে বল্লেন, এই কুদ্দুস, এতো ঠান্ডা লাগছে কেন! এসিটা একটু বাড়িয়ে দেও তো।” সাথে সাথে নারী কন্ঠ ভেসে আসল,“ স্যার, আপনার আদেশ শীরধার্য, আপনার সুবিধার্থে তাপযন্ত্র ১৭ ডিগ্রি থেকে ২০ ডিগ্রিতে উন্নীত করা হয়েছে। আপনার ভ্রমণ হোক সুন্দর ও উপভোগ্য। আপনার ঘুম পুরোপুরি উধাও হয়ে গেলো, গাড়িতে মহিলা মানুষ আসলো কোথা থেকে! চোখ মেলে সামনে তাকিয়ে দেখলেন ড্রাইভারের সিটে বসে নেই কেউ। আপনি ছোটখাটো স্ট্রোকও করতে পারেন। জ্বিন গাড়ি চালাচ্ছে না তো!
একটু মজা করলাম, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সত্যিই এমনটা হতে চলছে শীঘ্রই। আপনি গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়াবেন। অথচ গাড়িতে ড্রাইভার থাকবে না। গাড়ি চলবে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে। এখন আসি স্বয়ংক্রিয় গাড়ি কী? যে গাড়ি সফটওয়্যারের নির্দেশনার মাধ্যমে চালকবিহীন জ্যাম কিংবা ফাঁকা যেকোনো রাস্তায় চলতে পারবে অনায়সে তাই চালকবিহীন বা স্বয়ংক্রিয় গাড়ি।
স্বয়ংক্রিয় গাড়ির সম্ভাবনা-
বিশ্বের নামিদামী সব গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আঁটঘাট বেঁধে নেমেছে আগামীর স্বয়ংক্রিয় গাড়ির বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে। বর্তমান সময়ে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, গাড়ির উপর যে পরিমাণ নির্ভরশীলতা বাড়ছে, তাতে আগামী বিশ্বে গাড়ির বাজার হবে সবচেয়ে বেশি রমরমা। তাই গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলো এখন থেকেই স্বয়ংক্রিয় গাড়ি তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়ে নিয়েছে। নিশান, ফল্কসভাগেন, টয়োটা, মার্সেডিজ-বেনৎস ফোর্ড, টয়োটা, হোন্ডা এবং টেসলা অলরেডি ফ্যাক্টরি এবং ট্রায়াল পর্যায়ে চলে এসেছে। ফলে বলাই যায়, আগামী উন্নত বিশ্বে গাড়ি মানেই হবে স্বয়ংক্রিয় বা চালকবিহীন গাড়ি।
স্বয়ংক্রিয় গাড়ির প্রথম যাত্রা-
তবে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির আইডিয়া প্রথমে বাজারে নিয়ে এসেছিল গুগল। গুগল ২০০৯ সালের দিকে তাদের স্বয়ংক্রিয় গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্ণিয়ার হাইওয়েতে ট্রায়ালে গিয়েছিল। এই সময়ে কোনো রকম দুর্ঘটনা ব্যতিত গাড়িগুলো প্রায় সাত লক্ষ মাইলের চেয়েও বেশি পথ পাড়ি দিতে পেরেছিল বলে জানিয়েছিল গুগল ৷ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার হাইওয়েতে যেহেতু একটি নির্দিষ্ট লেন ধরে গাড়িগুলো চলেছিল তাই অনেকটা সহজই ছিল সেই পথ চলা ৷ কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে চালকবিহীন যে গাড়ি বাজারে আনার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে তা শুরু করতে হবে বর্তমানের গতানুগতিক রাস্তায় অনেক অনেক পরিবর্তন সাধন করতে হবে। পরিবর্তন আনতে হবে অবকাঠামোগত অনেক বিষয়েই। তাছাড়া দেশভেদে গাড়িগুলোকেও আলাদা আলাদা বৈশিষ্টের হতে হবে ৷ সে লক্ষ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার দ্বিতীয় পর্যায়ে আছে এখন পৃথিবীর বিখ্যাত জয়ান্ট টেক গুগল৷ আশা করা যায়, ২০২৫ সালের মধ্যেই গুগল বাণ্যিজিকভাবে স্বয়ংক্রিয় গাড়ি উৎপাদন শুরু করতে পারবে।
বাণ্যিজিক ট্রায়াল-
বাণিজ্যিক ট্রায়ালের ফলাফল গুগলকে পুরোই হতাশ করেছিল। কারণ, তাদের ট্রায়ালে দেখা গেছে, যতগুলো এক্সিডেন্ট ঘটেছিল, তাদের প্রায় সবগুলোই হয়েছিল মানুষের ভুলে। কারণ, স্বয়ংক্রিয় গাড়িগুলো নিয়ম মানলেও মানুষ নিয়ম মানাতে ততোটা আগ্রহী না এখনো। তবে স্বয়ংক্রিয় গাড়ি আসবেই। আর সেই লক্ষ্যেই বর্তমানে কাজ করছে, নিশান, ফল্কসভাগেন, টয়োটা, মার্সেডিজ-বেনৎস ফোর্ড, টয়োটা, হোন্ডা এবং টেসলাসহ আরও অনেক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি বাণ্যিজিক ট্রায়ালে গিয়েছে হোন্ডা এবং জেনারেল মোটর্সের যৌথ উদ্যোগের ১ম গাড়ি “ক্রজ অরিজিন”। এই গাড়ির চালকের সিট এবং স্ট্রেয়ারিং ছিল না। তারা অনেকটাই আশাবাদী। স্বয়ংক্রিয় গাড়ি খুব তাড়াতাড়ি বাজারজাত করা সম্ভব হবে। গাড়ি নির্মাতারা চাইছেন, চালক নির্ভরশীলতা এবং দূষণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় গাড়িগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
চালকবিহীন গাড়ির টেকনোলজি-
চালকবিহীন অটোমোবাইল গবেষণার প্রথিকৃত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যালটেক ইউনিভার্সিটি। স্বয়ংক্রিয় গাড়িগুলো হবে মেকানিক্যাল, কেমিক্যাল, হাইড্রোলিক, নিউমেটিক, রেফ্রিজারেশন এবং ইলেকট্রনিক নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তির সম্মিলন। এছাড়া চালকবিহীন গাড়িগুলোর ইঞ্জিন ও ইঞ্জিনের সাবসিস্টেম চালনার জন্য বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা যেমন- মাইক্রোপ্রসেসর, মাইক্রোকন্ট্রলার, সেন্সর, কম্পিউটার ইত্যাদি ব্যবস্থা যোগ করা হবে। ফলে গাড়িগুলো কম তেল শোষণ করে আরো ভালোভাবে পরিচালিত হবে এমন কি গাড়িগুলো যেহেতু স্যাটেলাইটের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবে সেহেতু গাড়িগুলো আগে থেকেই দেখতে পাবে রাস্তার কোথায় জ্যাম আছে, ফলে গাড়ি স্বয়ংক্রিয় ভাবেই বিকল্প রাস্তা খুঁজে নিবে। ফলে সময়, জ্বালানি দুটোই সাশ্রয় হবে। দূষণও হবে অনেক অনেক কম। তাছাড়া ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা, ইলেকট্রনিক ট্রান্সমিশন, এন্টিব্রেক সিস্টেম, সাস্পেনশন সিস্টেম ব্যবহার ফলে গাড়িগুলো সামনে কোন বস্তু বা প্রাণি আচমকা চলে আসলে তাৎক্ষণিক ব্রেক করতে পারবে। ফলে দূর্ঘটনা নেমে আসবে একেবারেই শূন্যের কোটায়।
এছাড়া স্বয়ংক্রিয় গাড়িতে থাকবে মেডিসেন্সর। যা যাত্রীর পাল্স রেট, হার্টবিটসহ মানুষের দৌহিত ক্রিয়াকলাপের চেকআপ করতে পারবে। যদি কোন যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে, তবে তাৎক্ষণিক কার্যত ব্যবস্থা এবং হসপিটাল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারবে। চিন্তা করে দেখুন একবার,আপনি গাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, গাড়ি আপনাকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা ধারুণ না!
স্বয়ংক্রিয় গাড়ি বাজারে আসার প্রতিবন্ধকতাসমূহ-
চালকবিহীন গাড়ি ভাবতেই বুঝতে পারি যে গাড়িতে মানুষের তেমন প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। তবে সফটওয়্যার বা সিস্টেম অবশ্যই কেন্দ্রীয়ভাবে মানুষ কর্তৃকই নিয়ন্ত্রিণ হবে। তবে কিছু সমস্যা অবশ্যই থেকে যায় কিংবা যাবে। কারণ আমরা মানুষ এখনো তেমন সতর্ক হইনি, রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রগুলোতে। গুগল যখন প্রথম ব্যস্ত সড়কে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির ট্রায়াল করেছিল। তখন তারা একপ্রকার হতাশই হয়েছিল। কারণ অধিকাংশ এক্সিডেন্ট হয়েছিল মানুষের নিয়ম না মানার কারণে। যেমন- যদি স্বয়ংক্রিয় গাড়ি কোথাও “থামুন”শব্দটা দেখতে পায় তবে গাড়ি থেমে যাবে, কিন্তু আমরা জানি মানুষ তখন গাড়ি থামাবে না। এমনকি মানুষ জরিমানার ভয় না থাকলে লাল বাতির সিগন্যালও মানতে চায় না, আশেপাশে পুলিশ না থাকলে দেয় দুমচে টান।
স্বয়ংক্রিয় গাড়ি যদি তার দৃষ্টি সীমার মধ্যে কোথায় খারাপ রাস্তা বা পানি দেখে তবে দাঁড়িয়ে যাবে। এমনকি তার স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়বে না একটি ছোট পাথরও। তবে মানুষ তো আর তা মানবে না। ফলে কিছু সমস্যা তো সৃষ্টি হবেই। প্রত্যেকটি বিষয়েরই উপকারি দিকের পাশাপাশি কিছু অপকারের দিকও থাকে যেমন- স্বয়ংক্রিয় গাড়ি বাজারজাত করা শুরু হলে পৃথিবীব্যাপিই ড্রাইভিং পেশার বিলুপ্তি ঘটবে। ফলে কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়বে। তাছাড়া এই গাড়ি চালানোর জন্য সড়ক ও হাইওয়ে গুলোতে অনেক নতুনত্ব আনতে হবে। ফলে তা হবে অনেক অনেক ব্যয়বহুল।
যাই হোক, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে তুলে আগামীতে পৃথিবীর উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করবে। ড্রাইভারদের অবহেলা, অসাবধানতা এবং পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে অধিকাংশ দূর্ঘটনা ঘটে। লক্ষ লক্ষ তাজা প্রাণ ঝরে যায় নিমিষেই। তবে আমরা আশাবাদী, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি হবে পরিবেশ বান্ধব। ফলে এক্সিডেন্ট শূন্যের আশার সাথে সাথে পরিবেশের অনেক উন্নতি সাধিত হবে। যেহেতু, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি হবে ইলেক্ট্রনিক, তাই দূষণ কমে যাবে অনেকাংশেই। তাই আমরা বিশ্বাস রাখতেই পারি, আগামী বিশ্বে স্বয়ংক্রিয় গাড়ি আসবেই। আগামী উন্নত বিশ্বে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির হবে দাপুটে পদার্পণ।
তথ্যসূত্র-
১. ডায়চে বেলে
২. যুগান্তর
৩. বাংলাটেক
৪. টেকনোলজি টুডে
বাংলা ওয়েব কনটেন্ট- ০৬
ব্যবসায়কি আইন কি এবং বিভিন্ন প্রকার ব্যবসায়কি আইন (উদাহরণ সহ)
সাধারণ অর্থে আইন হলো এমন কতগুলো নিয়মকানুন বা বিধি-বিধান, যা সমাজে বসবাসরত মানুষের জীবনযাত্রাকে সুষ্ঠ, সুন্দর এবং সুশৃংঙ্খলভাবে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যবসা বাণিজ্য বাণিজ্য সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজন হয় ব্যবসায়িক আইন। ব্যবসায়িক আইন হলো এমন আইন, যার অধীনে দেশের ব্যবসায় বাণিজ্য সুশৃঙ্গলভাবে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় যথা- একমালিকানা, অংশীদারী, যৌথমূলধনী, সমবায় প্রভৃতি চালু আছে। যদি ইচ্ছে মতো সবাই ব্যবসায় করে তবে অবশ্যই বিঘ্নিত হবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম। রক্ষা করা সম্ভব হবে না মালিক-শ্রমিক ভোক্তা কারো স্বার্থ। তাই একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে কিংবা একজন সফল ব্যবসায়ী হতে হলে অবশ্যই ব্যবসায়িক আইনের খুঁটিনাটি জানা থাকা জরুরি।
কী পয়েন্টস-
১. ব্যবসায়িক আইন শুধুমাত্র ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত।
২. ব্যবসায়িক আইন ভঙ্গ করলে তার ক্ষতি অর্থনৈতিকভাবে পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয় সর্বোচ্চ।
৩. যেকোন ক্ষেত্রেই আইন না জানলে ক্ষতিটা মূলত নিজেরই। আইন জানা নেই এই অজুহাত আদালত থেকে শুরু করে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায় না কখনোই।
৪. ব্যবসায়িক আইন জানলে ঝুঁকি মোকাবিলা করা সহজ হয় অনেকাংশেই।
৫. মালিক শ্রমিক আইন কারখানায় সুশৃঙ্খল কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬. ব্যবসায়িক আইন ব্যবসায়ে সফল হওয়ার পূর্ব শর্ত।
ব্যবসায়িক আইনের সংজ্ঞা (Definition of Business Law)
অতি সাধারণভাবে বলা যায়, আইনের যে দিক বা শাখা সুষ্ঠও সুন্দরভাবে ব্যবসায় পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রনের জন্য ব্যবহার করা বা অনুসরণ করা হয়, তাকে ব্যবসায়িক আইন বলে। অন্যভাবে বলা যায়, যে আইনের অধিনে একটি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাই ব্যবসায় আইন। কারো মতে ব্যবসায় সংক্রান্ত মামলা মোকদ্দমা যে আইনের দ্বারা নিম্পত্তি করা হয় তাকেই ব্যবসায়িক আইন বলে।
সর্বশেষে বলা যায়, ব্যবসায় সংক্রান্ত যে কোন লেনদেন এবং লেনদেন হতে সৃষ্ট সমস্যাদি নিয়ন্ত্রন ও নিস্পত্তি সংক্রান্ত বিধি-বিধান বা নিয়মকে ব্যবসায় বা বানিজ্যিক আইন বলে।
বাংলাদেশের ব্যবসায়িক আইনের উৎস (Sources of Business Law in Bangladesh)
অতিপ্রাচীন কাল হতেই বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে মুসলিম, হিন্দু ও বৌদ্ধ রীতি নীতি অনুযায়ী ব্যবসায় লেনদেন সমূহ নিয়ন্ত্রীত হতো। পরবর্তীতে বৃটিশদের শাসনামলে ব্যবসায় বানিজ্যের ক্ষেত্রে এই উপমহাদেশে বৃটিশ আইন যুক্ত হয়। তাই অদ্যবধি এই উপমহাদেশের ব্যবসায় বানিজ্যের ক্ষেত্রে ইংরেজী আইনের ব্যাপক প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশে ব্যবসায়-বানিজ্যে যে সমস্ত আইনের উৎসমূহ প্রচলিত রয়েছে তা নিম্নরূপ-
১। বিধিবদ্ধ আইন (Statutory Law) :ব্যবসায় আইনের অন্যতম উৎস হলো বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রনীত আইনসমূহ।
২। ইংরেজী সাধারণ/কমন আইন (English Common Law) : ইংরেজী কমন “ল” হলো বাংলাদেশের ব্যবসায় আইনের অন্যতম উৎস। যে সমস্ত ক্ষেত্রে বাংলাদেশে প্রচলিত আইন সমূহ কোন সমাধান দিতে পারেনা, সে সমস্ত ক্ষেত্রে বিচারপতিগণ ইংরেজী কমন ‘ল’ এর সাহায্য নেন ও সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দেন।
৩। স্থানীয় নীতি ও প্রথা (Local Usages and Customs): বাংলাদেশে ব্যবসায় আইনের অন্যতম একটি উৎস হলো স্থানীয় রীতিনীতি ও প্রথা। যদি কোন স্থানীয় রীতিও প্রথা ব্যবসায়-বাণিজ্যর সাথে বিতর্কিত না হয় তাহলে রীতি ও প্রথা ব্যবসায় আইনের ক্ষেত্রে প্রবর্তিত হয়।
৪। ন্যায়নীতি (Equity): বাংলাদেশের যে সকল ব্যবসায়ীক সমস্যা স্থানীয় রীতিনীতি ও প্রথা বা অন্যকোন আইন দ্বারা সমাধান না হয় সে সমস্ত ক্ষেত্রে বিচারপতিগণ ন্যায়নীতির উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ সিদ্ধান্তসমূহই পরবর্তিতে ব্যবসায় আইনের উৎস হিসেবে গণ্য হয়।
৫। একমালিকানা ব্যবসা ও আইন- (Enterprenureship and Laws): একমালিকানা ব্যবসায় হল একজন ব্যক্তির মালিকানাধীন এবং মালিক কর্তৃক পরিচালিত ব্যবসা। একমালিকানাধীন ব্যবসা এবং মালিক দুটি আলাদা স্বত্বা নয় বরং ব্যবসার সকল দায় দেনা এবং সম্পদ সমস্তই মালিকের একার। ব্যবসায়ের সমস্ত লাভ-ক্ষতি মালিক একাই ভোগ করেন ।
পৃথিবীর প্রায় ৮০% ব্যবসায় মূলত একমালিকানা ব্যবসায়। একমালিকানা ব্যবসায়ের মূলত প্রসার ঘটে ১৮৩৭ সালের কোম্পানি চাটার্ড আইন প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে এই আইন বৃটিশ পার্লামেন্টে The Joint Stock Company নামে সংশোধিত হয়ে কোম্পানি ব্যবসায়ের প্রবর্তন হয় এবং সর্বশেষ ১৯৩২ সালের সংশোধনীতে একমালিকানা ব্যবসায় অংশিদারিত্বের সৃষ্টি করা হয়।
বিভিন্ন বিভিন্ন প্রকার ব্যবসায়কি আইন (উদাহরণ সহ) Different Kinds of Business Law
(With Examples)
বর্তমান ব্যবসায় জগতে সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য একজন ব্যবসায়ীকে ব্যবসায় পরিচালনা সম্পর্কিত নানা বিধি-বিধান বা আইন জানা ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। ব্যবসায়-বাণিজ্য সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে পরিচালনা, নিয়ন্ত্রন ও চুক্তিসম্পাদনের জন্য একজন ব্যবসায়ির নিম্নের আইনগুলো জানা থাকা অত্যান্ত জরুরি।
১. চুক্তি আইন (Law of Contract): ব্যবসায় বাণিজ্য সুশৃঙ্গলভাবে পরিচালনা করার জন্য চুক্তি আইন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে নির্দিষ্ট কতগুলো শর্তপূরণ সাপেক্ষে যে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে চুক্তি বা সম্মতি বলে। চুক্তির শর্তগুলো নিয়ে যে আইন আলোচনা করে তাকেই চুক্তি আইন বলে। যেমন- পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার মধ্যে পণ্য ক্রয় বিক্রয় চুক্তি, দর্জির সাথে জামা তৈরির চুক্তি।
২। পণ্য বিক্রয় আইন (The sale of Goods Acts): বর্তমান প্রতিযোগীতামূলক বিশ্বে নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য একজন ব্যবসায়ীকে পণ্য বিক্রয় আইন জানতে হবে। এই আইন সম্পর্কে অবহিত থাকলে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই নিরাপদ ও ঝামেলামুক্ত থাকতে পারবে। যেমন- পণ্য বিক্রয় আইন ১৯৩০ এ বলা আছে কোন ব্যক্তি অবৈধ কোন পণ্য সরকারের লিখিত অনুমতি ব্যতিত বিক্রয় করতে পারবে না। এই আইনের মাধ্যমে মদ, গাঁজা, ইয়াবা বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
৩। অংশীদারী আইন (Partnership Act) : অংশীদারী ব্যবসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়। এব্যবসায়টি সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য প্রত্যেক অংশীদারকে অংশীদারী আইন সম্পর্কে জানতে হবে। যেমন- যৌথ মালিকানা ব্যবসা।
কোম্পানী আইন ১৯৯৪ এর (১৮ নং আইন) অধিকতর সংশোধনকল্পে প্রণীত কোম্পানী (দ্বিতীয় সংশোধন) আইন, ২০২০ এর ২৪ নং আইন এ বলা হয়েছে অনুসারে,
(ক) পাবলিক লিমিটিডে কোম্পানি-
পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি একধরনের সসীম দায়বদ্ধ কোম্পানি যারা জনগনের কাছে শেয়ার ছাড়তে পারে। যুক্তরাজ্য ও কমনওয়েলথভুক্ত দেশে এই ধরনের প্রতিষ্ঠান পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি বা পিএলসি নামে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটি পাবলিক কোম্পানি নামে পরিচিত। পৃথিবীব্যাপী জনপ্রিয় কোম্পানি সংগঠন হলো পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি (Public Limited Company/PLC)। এসকল কোম্পানী বাজারে শেয়ার ছাড়ার মাধ্যমে মূলধন জোগাড় করে থাকে। কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার তাদের পছন্দমাফিক যে কারো কাছে শেয়ার বিক্রি করতে পারেন। কোম্পানি আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জনসাধারণের কাছে শেয়ার ও বন্ড বিক্রি করতে পারে। বাংলাদেশে এধরনের কোম্পানির সদস্য সংখ্যা সর্বনিম্ন ৭ জন এবং সর্বোচ্চ শেয়ার দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে, শেয়ার অবাধে হস্তান্তরযোগ্য এবং কোম্পানি শেয়ার ও ঋণপত্র জনগণের উদ্দেশ্যে ক্রয়-বিক্রয়ের আহবান জানায়। মালিকানার ভিত্তিতে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিকে দুইভাগে এবং নিয়ন্ত্রণের ভিত্তিতে আরো দুভাগে ভাগ করা যায়:
- সরকারিপাবলিক লিমিটেড কোম্পানি:
কোনো কোম্পানির মালিকানা বা এর শেয়ার মালিকানার কমপক্ষে ৫১% শেয়ার যদি সরকারি মালিকানায় থাকে এবং এর পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সরকারের হাতে থাকে, তবে তাকে সরকারি মালিকানায় পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি বলে।
- বেসরকারিপাবলিক লিমিটেড কোম্পানি– কোনো কোম্পানীর শেয়ারের কিয়দংশ সরকার গ্রহণ করলে তাকে আধা-সরকারি কোম্পানি বলে। কোনো কোনো সময় সরকার শেয়ার মূলধনের শতকরা ৩০% বা ৪০% গ্রহণ করে। এতে সরকারি ও বেসরকারি মালিকানার সংমিশ্রণ ঘটে বলে একে আধা-সরকারি কোম্পানি বলে।
(খ) প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে ন্যূনতম শেয়ারহোল্ডার থাকতে হয় দুই জন। আর সর্বোচ্চ শেয়ারহোল্ডার হতে পারে ৫০ জন। এর বেশি শেয়ারহোল্ডার নিতে হলে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত করতে হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোম্পানির সদস্য সংখ্যা ও অবকাঠামোর উপর ভিত্তি করে কোন কোম্পানিকে লিমিটেড কোম্পানি বলা হয়। যে সীমাবদ্ধ দায় কোম্পানিতে সদস্যের সংখ্যা ন্যূনতম ২ বা সর্বোচ্চ ৫০ জন রাখা হয় এবং সীমাবদ্ধ দায়ের ভিত্তিতে কোম্পানিকে প্রদত্ত আইনের আওতায় নিবন্ধিত করা হয়, তাকে ঘরোয়া মালিকানায় সীমাবদ্ধ কোম্পানি বা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি (Private Limited Company) বলে। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তর ও ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ থাকে। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির কোনো শেয়ারহোল্ডার শেয়ার বিক্রি করতে চাইলে তাকে বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যই তা বিক্রি করতে হয়। তবে তাদের সম্মতি সাপেক্ষে বাইরের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তর করা যায়। কোম্পানি জনসাধারণের কাছে শেয়ার এবং ডিবেঞ্চার ও বন্ডসহ কোনো ধরনের ঋণপত্র বিক্রি করতে পারে না।
৪। বীমা আইন (Insurance Law ): বর্তমান ব্যবসায়ে জগতে বীমা একটি গরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ে ক্ষেত্র হিসেবে নিজের স্থান দখল করে নিয়েছে। মানুষ সব সময় নিজেদের ঝুঁকি বা অনিশ্চয়তা হতে দূরে রাখতে চায়। তাই বীমা আইন জানাটাও গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ- জীবন বীমা, মেয়াদী বীমা, স্বাস্থ্য বীমা ও কার্গো বীমা ইত্যাদি।
৫। কোম্পানী আইন (Company Law): বৃহদায়তন একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হলো কোম্পানী ব্যবসায়। বাংলাদেশে প্রচলিত রয়েছে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী। যেমন- বসুন্ধরা গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ অব কোম্পানী, কর্ণফুলী পেপার মিল, বিআরটিসি বাস সার্ভিস।
৬। কারখানা আইন (Factory Act): কলকারখানায় শ্রমিকদের কাজের সুবিধা, নিরাপত্তা, উন্নততর কাজের পরিবেশ ইত্যাদি নিশ্চয়তা বিধান কল্পে প্রবর্তন করা হয় কারখানা আইন। যেমন- ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর পূর্ব পাকিস্তান কারখানা আইন ১৯৬৫ কে সামান্য পরিবর্তন করে বাংলাদেশে কারখানা আইন ১৯৬৫ নামে হুবহু গ্রহণ করা হয়।
৭। শ্রমিক ক্ষতিপূরণ আইন (Labor Compensation Act): উৎপাদন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের বিপদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ আদায়ই এই আইনের মূল উদ্দেশ্য। যেমন- কর্মরত অবস্থায় কোন শ্রমিক আহত হলে তার চিকিৎসার ভার গ্রহণ, নিহত হলে পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান।
৮। মুজুরি পরিশোধ আইন (Payment of Wages Act): শ্রমিকরা তাদের কাজের বিনিময়ে যা পেয়ে থাকে তাই হলো মজুরী। এ মজুরী সম্পর্কে শ্রকিক ও মালিক পক্ষ সবসময় ভিন্ন ধারনা পোষন করে। ফলে ব্যবসায় ক্ষেত্রে সৃষ্ট হয় নানান সমস্যা। তাই উভয়েরই প্রকৃত আইন জানতে হবে। কর্মঘন্টা অনুযায়ী ন্যায্য মুজুরি, ঈদ বোনাস, ওভার টাইম মুজুরি হচ্ছে এই আইনের উদাহরণ।
৯। শ্রমিক নিয়োগ আইন (The Employment of Labur Act): ১৯৬৫ সালে সর্বপ্রথম দোকান, বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও শিল্পে চাকুরিরত শ্রমিকদের চাকুরীর শর্তাবলী নিয়ন্ত্রনের উদ্দেশ্যে প্রনীত হয় শ্রমিক নিয়োগ আইন। চাকুরীতে নিয়োগ, ছুটি, অপসারণ, ছাঁটাই, জরিমানা, লে-অফ, ধীরে কাজ করা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে এই আইনের উদাহরণ।
১০। দোকান ও প্রতিষ্ঠান আইন (The Shops and Establishment Act): ব্যবসায় বানিজ্যের ক্ষেত্রে দোকান ও প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই এদের কার্যাবলীকে সুষ্ঠও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য প্রবর্তিত হয় ১৯৬০ সালের দোকান ও প্রতিষ্ঠান আইন।
১১। সমবায় সমিতি আইন (Law of Co-operative Societies): সমবায়কে অধিকতর সুসংগঠিত ও ফলপ্রসু করার জন্য এ উপ-মহাদেশের তৎকালীন ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস এর খ্যাতনামা সদস্য মিঃ ফ্রেডারিক নিকলসন এর সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯০৪ সালে ভারতে সর্বপ্রথম সমবায় সমিতি আইন পাশ করা হয়।
১২ । মুল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ (Value Added Tax Act-1991): সরকার কর কাঠামো আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে দ্বৈত করের অবসান ঘটিয়ে মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ প্রবর্তন করেছে। মূল্য সংযোজন করের বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, এই করের প্রায় সকল পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য। ভ্যাট, ট্যাক্স হচ্ছে এই আইনের উদাহরণ।
১৩ । আয়কর আইন (Income Tax Act): যে কোন দেশের সরকারের আয়ের একটি প্রধান উৎস আয়কর। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয় একটি নির্দিষ্ট অংকের চেয়ে বেশি হলে আয়কর আইন অনুযায়ী আয়কর প্রদান অপরিহার্য্য।
উপরোক্ত ব্যবসায়িক আইনগুলো ব্যবসায়ের মূল কার্যাবলীর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত না হলেও আইন আদালত বা ক্ষতিপূরণ, ব্যবসায়ীক বৈধতা নিশ্চিতকল্পে খুবই প্রয়োজনীয়। শুধু পণ্য উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্তই ব্যবসায়ের পরিধি নয়। বরং পণ্যের বৈধতা, রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা এমনকি পণ্য সংশ্লিষ্ঠ শ্রমিক, কারখানা, মুজুরি সর্বক্ষেত্রেই জ্ঞান রাখা ব্যবসায়িক সফলতার পূর্বশর্ত। তাই বর্তমানে একজন আদর্শ ব্যবসায়ী হওয়ার জন্য ব্যবসায়িক আইন জানা কোন অংশেই অগুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই ব্যবসায়িক আইন জেনে এবং মেনে ব্যবসা করা প্রতিটি ব্যবসায়ীর একান্ত কর্তব্য।
রেফারেন্সসমূহ-
- ব্যবসায়আইনের বিভিন্ন দিক ও সফল উদ্যোক্তাদের কেস স্টাডি
- শিল্পোদ্যোগও ক্ষুদ্র ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা- মোঃ মোশাররফ হোসেন, বেদার উদ্দিন আহমেদ, আতাউর রহমান।
- ব্যবস্থাপনা- ড. আব্দুল আউয়াল খান ও আবু বকর সিদ্দীক।
- কারবারেরব্যবস্থাপনা- দূর্গাদাস ভট্টাচার্য।
- Entrepreneurship Development- Prof. Dr. Nazrul Islam
- কর্মী ব্যবস্থাপনা- প্রফেসর এম ওমর আলী।
- উৎপাদনব্যবস্থাপনা- প্রফেসর. ড. নাসিম আনজুম।
- Entrepreneurship Development- Prof. Dr. Md. Ataur Rahaman
- Entrepreneurship Development- Brain Debson.
- Entrepreneurship Development System- W.K. Kellogg.
- Entrepreneurship and Small Business Development- Northeast Mississipi Daily Journal
- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধনী)
বাংলা ওয়েব কনটেন্ট- ০৭
বীমা কী? বীমার প্রকারভেদ।
দূর্ঘটনাবিহীন জীবন কল্পনা করা নিতান্তই অমূলক। তাই এই দূর্ঘটনার রেশ কিছুটা বা অনেকটা কাটিয়ে উঠার ক্ষেত্রে বীমার ভূমিকা প্রশংসনীয়। মানুষের একার পক্ষে সকল দায় গ্রহণ করা সম্ভব নয়। তাই বীমা করার মাধ্যমে ঝুঁকির দায় বীমাপ্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করে অনেকটাই দায়মুক্তি সম্ভব। এছাড়াও প্রকারভেদে বীমা নানা রকম দায়, সুবিধা এবং সুযোগ প্রদান করে থাকে যা একজন মানুষের সহজ, সরল এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনে অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠছে দিন দিন। তাই বীমার মাধ্যমে নিরাপদ, নিশ্চিন্ত এবং অনাবিল জীবন উপভোগ এখন সময়ের দাবী। তবে বীমা করার পূর্বে শর্তাবলী, ঝুঁকি এবং দায়িত্বকর্তব্য জেনে বুঝে নেয়া গ্রাহকের জন্য খুবই জরুরি। অন্যথায়, বীমা গ্রাহকের জন্য কল্যাণকর নাও হতে পারে।
বীমা কী–
বীমা হলো অর্থের পারস্পরিক লেনদেনের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ ক্ষয়ক্ষতির ন্যায়সঙ্গত ও নির্দিষ্ট কিছু ঝুঁকির দায়ভার গ্রহণ। বীমা করার মাধ্যমে মূলত বীমাগ্রহিতা বীমা প্রতিষ্ঠানের সাথে নির্দিষ্ট কিছু ভবিষ্যৎ ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে চুক্তিভুক্ত হন এবং বীমা প্রতিষ্ঠানকে প্রতি মাসে মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ A_© প্রদান করার অঙ্গীকার করেন। যদি বীমাগ্রহিতা প্রতি মাসে নির্ধারিত অর্থ বা প্রিমিয়াম যথাযথভাবে প্রদান করেন, তবেই বীমাগ্রহিতা তার চুক্তি সংশ্লিষ্ট ক্ষয়ক্ষতির দায়ভার বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের উপর অর্পন করে ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন। যেমন- কোন একজন গাড়ির মালিক ÒকÓ নামক বীমা কোম্পানির নিকট গাড়ির অগ্নিবীমা করলেন। এবং শর্তানুসারে, তিনি প্রতি মাসে বীমা বাবদ 5,000/- (পাঁচ হাজার) টাকা বীমা প্রতিষ্ঠান বরাবর জমা দিচ্ছেন । এখন যদি বীমাগ্রহিতার গাড়িতে আগুন লেগে গ্রহিতার 5,00,000/- (পাঁচ লক্ষ) টাকাi ক্ষতি সাধিত হয় তবে তখন এই পুরো ক্ষতিপূরণই বীমা কোম্পানি তাদের বীমা পলিসি আইনে দিতে বাধ্য। অথচ বীমা গ্রহিতা প্রতিমাসের কিস্তি বাবদ পরিশোধ করেছেন 12 মাসে মাত্র 60,000/- টাকা। অথচ তার বিপরীতে পেয়েছেন 5,00,000/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা। এখানেই মূলত বীমাগ্রাহকের লাভ। ক্ষয়ক্ষতির প্রায় পুরোটাই বীমার মাধ্যমে পুষিয়ে নেয়া যায়। যা পুষিয়ে নেওয়ার অন্য কোন কার্যকর উপায় নেই।
কী পয়েন্টস–
১। বীমা শুধুমাত্র আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে।
২। বীমায় মুদ্রাস্ফীতির সঙ্কা রয়েছে। তাই ভেবেচিন্তে বীমা করা বুদ্ধিমানের কাজ।
৩। বীমা থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় কিছুটা প্রমাণ সাপেক্ষ তাই আপনার বিস্তারিত জেনে বুঝে বীমা করা একান্ত কর্তব্য।
৪। সরকারি, বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠানেই বীমা করা যায়। তবে কোথায় বীমা করবেন সেটা আপনার সিদ্ধান্ত।
৫। বীমা দীর্ঘ মেয়াদী প্রক্রিয়া। তাই আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা মিলিয়ে নিন।
বীমার প্রকারভেদ-
বীমা সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথা-
(ক) জীবন বীমা ও
(খ) সাধারণ বীমা।
জীবন বীমা– জীবন বীমা এমন একটি চুক্তি যা একজন বীমা গ্রহীতা ও একটি বীমা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পাদিত হয়। যেখানে বীমা প্রতিষ্ঠান এই মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করে যে, বীমা গ্রহীতার মৃত্যু হলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বীমা গ্রহীতার উত্তরাধিকারীগণকে প্রদান করা হইবে। চুক্তির শর্তানুসারে, কখনো কখনো মারাত্মক অসুস্থ হলেও বীমা গ্রহীতা অর্থ পেয়ে থাকেন। বীমা গ্রহীতা সাধারণত এককালীন বা নির্দিষ্ট সময়ান্তে বীমা কর্তৃপক্ষকে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ বা প্রিমিয়াম প্রদান করে থাকেন ।
বীমা গ্রহীতার সবচেয়ে বড়ো সুবিধা হচ্ছে “মানসিক প্রশান্তি” লাভ। কারণ, তিনি জানেন যে তার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীরা অর্থ সমস্যায় পতিত হবে না। এবং তাদের জীবনধারণের জন্য একটি মোটামুটি ভালো এমাউন্ট রেখে যাওয়া হচ্ছে।
এই পদ্ধতিটিতে অবসর গ্রহণের পর আর্থিক সুবিধা লাভের জন্যও ব্যবহার করা হয়, যদি বীমা গ্রহীতা সতর্কতার সাথে বীমা গ্রহণ করেন ও শর্তাবলীতে এরূপ উল্লেখ করে থাকেন তবেই সে শর্তাবলীর উপর ভিত্তি করে বীমা কার্যকর হয়ে থাকে।
এছাড়াও জীবন-নির্ভর বীমা চুক্তি দুটি প্রধান ধারায় বিভক্ত হয়ে থাকে। যেমন-
- নিরাপত্তাপলিসি
- বিনিয়োগপলিসি
জীবন বীমা একটি আইনগত চুক্তি এবং চুক্তির শর্ত বীমার আওতা দ্বারা সীমাবদ্ধ। এখানে বিশেষ শর্তাবলী লিখিত থাকে এবং তার দায় বীমা গ্রহীতার উপর বর্তায়; যেমনঃ আত্নহত্যা, যুদ্ধ প্রভৃতি কারণে মৃত্যু ঘটলে বীমা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বীমা গ্রহীতার উত্তরাধিকারীকে কোনোরূপ অর্থ প্রদান করা হয় না। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পরিচালিত “জীবন বীমা কর্পোরেশন“ নামক বীমা কোম্পানিটি নিম্নোক্ত জীবন বীমাসমূহ প্রদান করে থাকে।
০১. আজীবন বীমা (লাভসহ)
০২. মেয়াদী বীমা (লাভসহ)
০৩. প্রগতিশীল মেয়াদী বীমা (লাভসহ)
০৪. প্রত্যাশিত মেয়াদী বীমা (লাভসহ)
০৫. বহু কিস্তি বীমা (লাভসহ)
০৬. ম্যারেজ এন্ডাওমেন্ট পলিসি
০৭. যুগ্ম মেয়াদী বীমা
০৮. শিশু নিরাপত্তা বীমা
০৯. দ্বৈত নিরাপত্তা মেয়াদী
১০. পেনশন বীমা
১১. স্বাস্থ্য বীমা
১২. একক প্রিমিয়াম পলিসি (লাভসহ)
১৩. ট্রিপল প্রটেকশন পলিসি
১৪. ওভারসিস এসুরেন্স পলিসি (লাভসহ)
১৫. আজীবন বীমা (লাভ বিহীন)
১৬. মেয়াদী বীমা (লাভ বিহীন)
১৭. প্রত্যাশিত মেয়াদী বীমা (লাভ বিহীন)
১৮. ওভারসিস মেডিক্লেইম পলিসি
১৯. স্ব-নির্ভর বীমা (লাভ বহিীন)
২০. সম্পত্তি কর বীমা (লাভ বিহীন)
২১. ছেলে মেয়েদের শিক্ষা ও বিবাহ বীমা (লাভসহ)
২২. নিশ্চিত বোনাস মেয়াদী বীমা
২৩. মানি ব্যাক টার্ম পলিসি (লাভ বিহীন)
২৪. সাময়িক বীমা (লাভ বিহীন)
২৫. স্ব-নির্ভর বীমা (একক প্রিমিয়াম পলিসি)
২৬. দারিদ্র বিমোচনে জীবন বীমা স্কিম
২৭. প্রবাসী বীমা
২৮. জেবিসি মাসিক সঞ্চয়ী স্কিম
২৯. জেবিসি প্রত্যাশিত মাসিক সঞ্চয়ী স্কিম
৩০. সামাজিক নিরাপত্তা বীমা (লাভসহ)
৩১. প্রমিলা ডিপিএস (লাভসহ)
৩২. হজ্জ্ব বীমা (লাভসহ)
৩৩. গ্রামীণ জীবন বীমা (লাভসহ)
৩৪. বন্ধকী নিরাপত্তা বীমা (মর্টগেজ প্রটেকশন পলিসি)
উপরোক্ত বিষয়গুলোই মূলত জীবন বীমার প্রকারভেদ। জীবনবীমা মূলত জীবন সংশ্লিষ্ট ক্ষয়ক্ষতির উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়ে থাকে তাই জীবন বীমা দ্বারা জীবন সংশ্লিষ্ট ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভবপর হয়।
উল্লেখ্য যে, প্রতিষ্ঠালগ্নে জীবন বীমা কর্পোরেশন ১৫.৭০ কোটি টাকা ঘাটতি, ২১.৮৩ কোটি টাকা লাইফ ফান্ড এবং ৬.৪৫ কোটি টাকা প্রিমিয়াম এবং ১৭ (সতের) টি বাণিজ্যিক ভবন (১০টি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত) নিয়ে এর কর্মকান্ড শুরু করে সমসাময়িককালে ২০২১ সালের শেষে লাইফ ফান্ড ২,৩০৪.৮৮ কোটি টাকায় উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে। সারা দেশে মোট ৮ টি রিজিওনাল, ১২ টি কর্পোরেট, ৮১ টি সেলস এবং ৪৫৬ টি শাখা অফিস নিয়ে জেবিসির সর্ববৃহৎ বীমা সেবা প্রদান করছে সংস্থাটি ।
সাধারণ বীমা– সাধারণ বীমা বলতে বুঝায় মূলত জীবন ব্যতিত সম্পদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বীমাগ্রহিতা বীমা প্রতিষ্ঠানের সাথে পারষ্পরিক লেনদেনের মাধ্যমে যে বীমা কার্যক্রম গড়ে তোলে তাকে সাধারণ বীমা বলে। যেমন- গাড়ি, বাড়ি, জাহাজ এরূপ সম্পদ বীমা করার মাধ্যমে এরূপ সম্পদের দূর্ঘুটনায় ক্ষতির মাত্রা পুষিয়ে নিতে যে বীমা করা হয় তাকেই সাধারণ বীমা বলা হয়। এক্ষেত্রে সম্পদের মূল্য এবং তার ক্ষতির আগাম সম্ভাব্য পরিমাণের উপর ভিত্তি করে বীমা গ্রাহককে প্রতি মাস অন্তর অন্তর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বীমা প্রতিষ্ঠান বরাবর জমা দিতে হয়।
সাধারণ বীমা বহু প্রকারের হয়ে থাকে। কোম্পানিভেদে সাধারণ বীমার ধরণ ও প্রকার আলাদা আলাদা। তবে বাংলাদেশ ও বিশ্বে বহুল প্রচলিত সাধারণ বীমা সমূহের মধ্যে অন্যতম সাধারণ বীমাগুলো হচ্ছে-
- গাড়িবীমা
- নৌ- বীমা
- অগ্নিবীমা
- দুর্ঘটনাজনিতবীমা
- অপহরণবীমা
- স্বাস্থ্যবীমা
- যাত্রীবীমা
- উড়োজাহাজবীমা
- কার্গোবীমা
- পণ্যবীমা
- কর্মবীমা
- উন্নয়নবীমা
- ভ্রমণবীমা
- সম্পত্তিবীমা
- গৃহবীমা
- বাণিজ্যিকবীমা
- ইঞ্জিনিয়ারিংবীমা
উপরোক্ত বীমা সমূহ মূলত সম্পদ ও সম্পত্তির উপর ভিত্তি করে সেবা প্রদান করে থাকে। যা সরাসরি মানুষের জীবন এবং মৃত্যুর সাথে জড়িত নয়। তাই এই বীমাসমূহকে সাধারণ বীমা বলা হয়। বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত “সাধারণ বীমা কর্পোরেশন” মূলত একমাত্র রাষ্ট্রয়ত্ত প্রতিষ্ঠান যা বাংলাদেশে সাধারণ বীমা সুবিধা প্রদান করে থাকে। এছাড়া এদেশে অনেক বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেগুলো বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করার মাধ্যমে কাস্টমারকে আকৃষ্ট করে বীমা করার জন্য।
বীমার সুবিধা–
বীমা করার মাধ্যমে একজন মানুষ তার জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সক্ষম হয়ে থাকে। আমরা জানি, মানুষের জীবনের মূল্য অপরিসীম তবে একজীবন মানুষের জীবন বীমা করা থাকলে তার অসুস্থতায় বীমা তার চিকিৎসা ভার বহন করে, তার মৃত্যুতে তার ওয়ারিশগণ একটি ভালো এমাউন্ট লাভ করে ফলে মানুষটির অবর্তমানে উক্ত অর্থ তাদের কিছুটা হলেও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। সাধারণ বীমার মাধ্যমে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণে অনেকটাই সহায়তা পাওয়া যায় বীমা কোম্পানি থেকে। ফলে দূর্ঘটনায় বীমাগ্রহিতাকে অর্থ চাপ তেমনভাবে মোকাবিলা করতে হয় না। অনেকক্ষেত্রে দূর্ঘটনা সংশ্লিষ্ট সহায়তাও বীমা প্রতিষ্ঠান প্রদান করে থাকে। ফলে বীমা গ্রহিতা অনেকাংশেই চাপ মুক্ত থাকতে পারেন।
এছাড়াও বীমার আরও বেশ কিছু সুবিধাবলী রয়েছে। যেমন-
(১) বীমা জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
(২) বীমা মূলধন সৃষ্টির পাশাপাশি লভ্যাংশও সৃষ্টি করে।
(৩) বীমা বৃদ্ধ বয়ন এবং আপদকালীন সম্বল হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ায়।
(৪) বীমা অর্থনৈতিক স্তম্ভে পরিণত হয়ে মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করে।
(৫) বীমা ব্যবসায়ে মূলধন যোগানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(৬) মুদ্রা স্ফীতি হ্রাসে বীমা একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর প্রক্রিয়া।
(৭) বীমা সামাজিক সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধানে বদ্ধ পরিকর।
বীমার অসুবিধা সমূহ–
(১) শক্তিশালী বীমা আইন না থাকায় এবং মানুষ আইন সম্পর্কে ভালো ধারণা না রাখায় কতিপয় বীমা কোম্পানীসমূহ গ্রাহকের নির্ধারিত অর্থ প্রদান না করে গড়িমসি করে।
(২) ইসলাম বীমা সমর্থন করে না। কারণ, ইসলাম বিশ্বাস করে যার যার ক্ষতির দায়ভার তার তার। অন্য কেউ তার ক্ষতির দায়ভার নিতে পারবে না। (সূরা ইউসুফ, আয়াত- 79)
(২) অধিকাংশ সময়ই দেখা যায়, বীমা করার সময়ের শর্তাবলী, বীমা সমাপ্ত হওয়ার পর মূলধন ফেরত প্রদানের শর্তাবলী এক রকম হয় না। ফলে গ্রাহক তার কাঙ্খিত অর্থ ফেরত পায় না।
(৩) বীমা কোম্পানীর ভুয়া নাম ব্যবহার করে মফস্বলে অসহায়, সহজ, সরল মানুষদের টার্গেট করে অনেক সময় বিশাল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়। তাই বীমা কোম্পানির প্রকৃত তথ্য জেনে বীমা না করলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
(৪) বীমা অনেক সময় সাপেক্ষ প্রক্রিয় ফলতঃ মানুষ শেষ পর্যন্ত কন্টিনিউ করার শক্তি হারিয়ে ফেলে অনেকক্ষেত্রে।
(৫) বীমার কোন লুকায়িত শর্ত আছে কিনা তা জেনে বীমা না করলে পরবর্তীতে বীমা থেকে কাঙ্খিত সুবিধা পাওয়া সম্ভব হয় না।
উপসংহার–
সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার 01 মার্চকে জাতীয় বীমা দিবস ঘোষণা করেছে এবং প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারি অর্থায়ন ও উদ্যোগে জাতীয় বীমা দিবস পালন করা হয়। বীমা আইন 2009 এর মাধ্যমে বীমায় বর্তমানে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে যেন বীমা প্রকৃতই জনবান্ধব হয়। তাই বীমা করার মাধ্যমে বর্তমানে নিজের এবং নিজের সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে। যেকেউ চাইলে এখন বীমা করে নিজের, পরিবারের এমনকি সম্পদ বা সম্পত্তিরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। তবে তার আগে বীমা কোম্পানির জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা, গ্রহণযোগ্যতা সর্বশেষ বিশ্বস্ততার জায়গাসমূহ বীমা গ্রহিতাকে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। বর্তমানে অনলাইনেও বীমা করা যায় এবং মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমেও প্রতিমাসের নির্ধারিত প্রিমিয়াম জমা দেয়া যায়। ফলে বীমা করা এবং বীমার রক্ষণাবেক্ষণ এখন অনেক অনেক সহজ ও নিরাপদ। তাছাড়া বীমায় ক্ষতিকর তূতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ লাগছে না একটুকুনও তাই বীমার মাধ্যমে উপকৃত হোক সবাই। সেই প্রত্যাশাই সতত।
তথ্যসূত্র-
- জীবন বীমা সম্পর্কে জানুন- বীমা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত।
- ১ম বিশ্বযুদ্ধ হইতে আমেরিকায় জীবন বীমার ইতিহাস।
- প্রগতি বাংলা নিউজ
- রাষ্ট্রয়ত্ব, জীবন বীমা কর্পোরেশন
- সোনালী বীমা পলিসি
- জীবনবীমা নীতির প্রকার
- মেয়াদীবীমা
- সমগ্রজীবন বীমা
- এনডাউমেন্টপ্ল্যান
- ইউনিটলিঙ্কড ইন্স্যুরেন্স প্ল্যান (ULIP)
- মানিব্যাক পলিসি
- শিশুপরিকল্পনা.
- https://www.fincash.com/l/bn/insurance/types-life-insurance#types-of-life-insurance-policies-1
বাংলা ওয়েব কনটেন্ট- ০৮
একটি পণ্যের জীবনচক্র যা আপনার জানা উচিত
একটি পণ্যের জীবনচক্র বলতে মূলত বুঝানো হয় পণ্যের উৎপাদন থেকে শুরু করে, প্যাকেজিং, লেভেলিং, মান যাচাই, সংশ্লিষ্ট দপ্তর হতে সনদ সংগ্রহ শেষে বাজারজাতকরণ, বিপণন, ভোগ, ত্যাগ এবং সর্বশেষ উচ্ছিষ্ট বা বর্জ্যে পরিণত হওয়ার সম্পূর্ণ ধাপসমূহের সমন্বিত অবস্থা। একটি পণ্যের উৎপাদন থেকে ভোগ এবং সর্বশেষ বর্জ্যে পরিণত হওয়াই ঐ পণ্যের জীবনচক্র। তবে বর্জ্য থেকেও নতুন আরেকটি পণ্য তৈরি হতে পারে, তবে তখন সেই উৎপাদিত পণ্যের অংশ হিসেবেই সেই বর্জ্য বিবেচিত হবে। আগের পণ্যের জীবনচক্রের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে না।
একটি পণ্যেও জীবনচক্রের বেশ কয়েকটি ধাপ লক্ষ্য করা যায়। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-
(১) পরিকল্পনা- কোন একটি পণ্য উৎপাদন করার পূর্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার রয়েছে আবার বেশ কয়েকটি ধাপ। সেগুলো একটু আলোচনা করলে দেখতে পাওয়া যায়-
(ক) বাজার যাচাই- বাজার যাচাই ছাড়া পণ্য তৈরি করা মাঝিবিহীন নৌকোর মতো। তাই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সবার আগে সম্ভাব্য পণ্যটির বাজার যাচাই করতে হয়। এই বাজার যাচাইয়ের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভোক্তা নির্বাচন। ভোক্তা নির্বাচন অতি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এর উপরই একটি পণ্য উৎপাদনের মূল পরিকল্পনা কী হবে তা নির্ভর করে। যদি ভোক্তা হয় শিশু তবে তা শিশু সুলভ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ডিজাইন ও পরিকল্পনা করে তৈরি করার প্রসেসে যেতে হয়। আবার এই শিশুদেরও ক্লাস বা শ্রেণি মাথায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। যদি এমন হয় পণ্যের টার্গেটে থাকা শিশুরা অধিকাংশই রিচ কিড তবে পণ্যের ডিজাইন এবং কাচামালে দামী পণ্য এবং গুণগত মানে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে হয়।
(খ) লাইফ টাইম- লাইফ টাইম বা ব্যবহার সীমা হচ্ছে পণ্যটি কত সময় ধরে ভোক্তার অধীনে ব্যবহার্য্য হিসেবে থাকবে। তাই লাইফ টাইম ভেবে পরিকল্পনা করতে হয়। একটি পণ্য সচরাচর কত সময় ধরে ব্যবহার করা হবে সেটির উপর নির্ভর করে পণ্যটির কাঠামো এবং কাঠামোর কাচাঁমাল বাছাই করতে হয়। এমন যদি হয়, পণ্যটি একটি খেলনা গাড়ি তবে এতে নি¤œমানের প্লাস্টিক ব্যবহার করা হবে। কিন্তু যদি পণ্যটি হয় রিমোট কন্ট্রোল কার তবে সে পণ্যের কাচাঁমাল হবে তুলনামূলক উন্নত প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম, কপার ও সংশ্লিষ্ট ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের সমন্বয়।
(গ) পণ্যটির সার্ভিস ক্ষমতা- একটি পণ্য মূলত কী কাজের জন্য তৈরি করা হবে তার উপর পণ্যের গঠন অনেকাংশে নির্ভর করে। যেমন- মিনারেল ওয়াটারের বোলত সাময়িক সময়ের জন্য হওয়ায় তুলনামূলক নমনীয় এবং হালকা ধাচের প্লাস্টিক কাচাঁমাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে কোমল পানীয়, জুস, ভিনেগার, টয়লেটিজ প্রোডাক্টেও বোতল তৈরিতে ভালো এবং তুলনামূলক দৃঢ় প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। যার লাইফ টাইমও মিনারেল ওয়াটারের বোতলের চেয়ে বহুগুণ বেশি।
(ঘ) উৎপাদন ব্যয় ও পণ্যের চাহিদার সমন্বয়- একটি পণ্য ভোক্তার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য ভোক্তার প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে পণ্যটির মূল্য এবং প্রয়োজনীয়তার একটি সমন্বয় সাধন করতে হয়। পণ্যের প্রয়োজনীয়তা ও পণ্যের মূল্যের অনুপাত সমান বা কাছাকাছি না হলে পণ্যটি তার বাজার হারায় আবার পণ্যের প্রয়োজনীয়তার তুলনায় মূল্য অতিরিক্ত কম হলে পণ্যটির অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলাসহ পণ্যটি তার গ্রহণযোগ্যতা হারায়। ফলে উৎপাদন ব্যয় ও পণ্যের চাহিদার সমন্বয় না থাকলে উক্ত পণ্যটি লস প্রজেক্টে পরিণত হয়।
এই চারটি ধাপের বিশ্লেষণী রূপ থেকেই মূলত একটি পণ্যের উৎপাদনকল্পে চূড়ান্ত পরিকল্পনা গৃহিত হয়।
(২) পণ্য উৎপাদন- পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখতে হয় উৎপাদন ব্যয় যতটা সম্ভব কমানো। পণ্য উৎপাদনে যত কম সময়, কাচাঁমাল এবং শ্রমিক ব্যবহার করা যায় ততোই পণ্যের উৎপাদন খরচ কমিয়া আনা সম্ভবপর হয়। ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত রোবটিক সিস্টেমে উৎপাদনে যেতে কার্যকর ব্যবস্থা এবং রোবটিক সিস্টেমে নির্ভরতা সৃষ্টি করছে। পণ্যের জীবনচক্রের সময়ও নির্ধারিত হয় এই পণ্য উৎপাদন ধাপেই। এধাপে পণ্যের উৎপাদনে চাপ, তাপ, গুণগত মান, গঠন কাঠামো পণ্যের জীবনচক্রকে কখনো ত্বরান্বিত করে, কখনো বা করে বাধাগ্রস্ত। তাই এই ধাপকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের সাথে দেখতে হয়।
যেমন- একটি গাড়ি উৎপাদনের সময় সরবরাহকৃত কাচাঁমাল, পণ্যের গঠন, চাপ ও তাপের সমন্বয়ে গাড়িটির আয়ুকাল বা লাইফটাইম কত তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়। তাই পণ্যের জীবনচক্রে উৎপাদন কার্যক্রম সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে সম্পন্ন করতে হয়।
(৩) মান যাচাই- পণ্যটির উৎপাদন সম্পন্ন হলেই এর মান যাচাই করতে হয়। দেশভেদে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মান যাচাইয়ের দায়িত্ব পালন করে থাকে। যেমন- বাংলাদেশে বিএসটিআই। এছাড়া আর্ন্তজাতিক পর্যায়েও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা মান যাচাইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এসকল প্রতিষ্ঠান সরকারের পক্ষ হয়ে কাজ করে। অনেক সময়ই এসব মান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র ব্যতিত পণ্যটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের অনুমতি পায় না। আবার যদি পণ্যটি তার যথাযথ মান অর্জনে সক্ষম না হয় তবে তা উৎপাদন বন্ধ বা বাতিল ঘোষণা করা হয়। সর্বোপরি একটি পণ্যের মান যাচাই ছাড়া সেটা ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানো অনুচিত যদিও বিভিন্ন দেশে আইনের কঠোরতা এবং যথাযথ প্রয়োগের অভাবে অনেক মানহীন পণ্যেও বাজার সয়লাব হতে দেখা যায়। তবে উন্নত বিশ্বে মান যাচাইয়ের বিষয়টিকে খুব ভালোভাবে মেনটেইন করা হয়ে থাকে। তাছাড়া কোন পণ্যের ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছার জন্য মান ঠিক থাকাটা নৈতিকভাবেও অতি গুরুত্বপূর্ণ। মানহীন পণ্য অনেক সময় মৃত্যুরও কারণ হতে পারে!
(৪) প্যাকিজিং- এই ধাপে পণ্যটি বাজারজাত করার জন্য প্যাকেজিং বা মোড়কজাত করা হয়। তবে এই ধাপ অতোবেশি গুরুত্ব বহন করে না। তবে এটিও পণ্যের জীবচক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
(৫) বিপণন- এই ধাপটি পণ্যকে ভোক্তার হাতে পৌঁছে দিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বলা যায়, পণ্যটি ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানের জন্য এই ধাপ হচ্ছে গোল্ডেন স্টেজ। একটি পণ্য যতোই মানসম্পন্ন হোক না কেন যদি তা পর্যাপ্ত প্রচার ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সাপেক্ষে ভোক্তা বরাবর পৌঁছানো সম্ভব না হয় তবে সে পণ্য বাজারে টিকতে পারে না। তাই প্রত্যেকটি কোম্পানী তাদের আয়ের বা বাজেটের অনেক বড়ো একটা অংশ পণ্যের প্রচারের জন্য ব্যয় করে থাকে। বিপণনে ভোক্তাকে আকৃষ্ট করার জন্য পণ্যের গুণগান সম্পন্ন প্রচার, ব্যান্ড স্পন্সর, বিভিন্ন লোভনীয় অফার এবং বিক্রেতাদেরকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে। তবে প্রকৃত সত্য হচ্ছে, একটি পণ্যেকে ভোক্তার হাত পর্যন্ত পৌঁছাতে কর্তৃপক্ষের যা যা করতে হয় তার সব ব্যয়ভারই কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোক্তাকেই বহন করতে হয়!
(৬) ভোক্তার ব্যবহার- ভোক্তার হাতে পণ্য পৌঁছার পর ভোক্তা তার প্রয়োজনভেদে একই পণ্যের অনেক রকম ব্যবহার করতে পারে আবার দেখা যায়, একটি পণ্যের সর্বাবস্থায় একই ধরণের ব্যবহারও হতে পারে। তবে এই ভোক্তার ব্যবহার ধাপটিতেই মূলত পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা, বাজারে টিকে থাকার প্রায় পুরোটাই নির্ভর করে। ভোক্তা যদি তার ক্রয়কৃত পণ্যের কাঙ্খিত ব্যবহার করতে না পারে তবে সে পরবর্তীতে বিকল্প চিন্তা করে। তবে এক্ষেত্রে পণ্যটি কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, কতটা নিয়ম নীতি মেনে তা ব্যবহার করা হচ্ছে তা বিবেচনার বিষয়। ভোক্তার ব্যবহারই কিন্তু একটি পণ্যের প্রকৃত উদ্দেশ্য তাই এই ধাপের প্রতি খেয়াল রেখে পরিকল্পনা করাটা সবচেয়ে জরুরি।
(৭) পণ্যের বর্জ্যে পরিণত হওয়া- একটি পণ্য তার ব্যবহারের উদ্দেশ্য পূরণ হওয়ার পর বর্জ্যে পরিণত হয়। এই বর্জ্য হচ্ছে পণ্যের জীবনচক্রের একেবারে শেষ ধাপ। অধিকাংশ সময়ই এই বর্জ্য থেকে পুনরায় সেই পণ্যটি উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। ফলে বর্জ্য থেকে নতুন পণ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হয়। যখন একটি পণ্য বর্জ্যে পরিণত হয় এবং তা থেকে নতুন পণ্য তৈরির উদ্যেগ গ্রহণ করা হয় তখনই পণ্যটির জীবন চক্র সমাপ্ত হয়।
পণ্যের জীবন চক্র শুধু একটি পণ্যের জন্য নয় মানুষ থেকে শুরু করে অর্থনীতি, সমাজ, রাষ্ট্র এবং প্রকৃতি সকল বিষয়ের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, মানুষের জন্য পণ্যের জীবনচক্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেহেতু, এই পৃথিবীর সম্পদ পর্যাপ্ত তাই আমরা প্রায়শই দেখতে পাই একটি পদার্থ পরিবর্তিত হয়ে আরেকটি পদার্থে পরিণত হয়। এভাবেই পৃথিবীর সম্পদসমূহ আমাদেরকে জীবনধারণের জন্য সহায়তা করে থাকে, তাই পণ্যের জীবনচক্র জেনে পণ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এই পৃথিবীর সম্পদ সীমিত, তাই সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা আমাদের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য।
বাংলা ওয়েব কনটেন্ট- ০৯
বৈদ্যুতিক গাড়ির অদ্যপান্ত, যা আপনার জানা দরকার
বর্তমান সময়ে পুরো পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত বিলিয়ন গ্যালনেরও বেশি জ্বালানী তেলের প্রয়োজন হয় গাড়ি চালাতে। এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় এই জ্বালানী তেলের মজুদ পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে ফলে কার্যত ব্যাহত হবে যান চলাচল। আর বর্তমানে যাতায়াত থেকে শুরু করে পণ্য পরিবহন এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে জ্বালানী তেল ব্যতিত স্বাভাবিক কার্যক্রম কল্পনার করা যায়। তাই নীতিনির্ধারকরা আগামীতে এমন কিছু নবায়নযোগ্য শক্তির সন্ধান করছেন, যা থেকে শক্তি উৎপন্ন করে যত প্রয়োজন ব্যবহার করা যাবে এবং এই শক্তি শেষ হবে না সহজে। সেই সুবাদে বিদ্যুত নিয়ে আশা জাগানিয়া রিপোর্ট প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। তাই ধারণা করা যায় আগামী বিশ্ব হবে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিশ্ব। তাই চলুন জেনে নেই বৈদ্যুতিক গাড়ির অদ্যপান্ত।
- বৈদ্যুতিক গাড়ি কী?
যে গাড়ি বৈদ্যুতিক শক্তির সাহায্যে চালনা করা হয় তাকেই বৈদ্যুতিক গাড়ি বলে। অর্থ্যাৎ, যে গাড়িতে জ্বালানী শক্তির দ্বারা ইঞ্চিন ব্যবহার না করে এক বা একাধিক অধিক চার্জ ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি যুক্ত করার মাধ্যমে সেই বৈদ্যুতিক শক্তি দ্বারা মটরের সাহায্যে গতি শক্তি উৎপন্ন করে গাড়ি চালনা করা হয় তাকেই বৈদ্যুতিক গাড়ি বলা হয়।
- বৈদ্যুতিক গাড়ির ভবিষ্যৎ-
বর্তমানে ডিজেল, পেট্রোল কিংবা অকটেনের মতো প্রায় সকল জ্বালানী দ্বারা চালিত ইঞ্জিন থেকে প্রতিনিয়ত পরিবেশ মারাত্নক ভাবে দূষিত হচ্ছে। ফলে পরিবেশ সচেতনার লক্ষ্য হিসেবে আগামীতে জ্বালানী তেলের ব্যবহার কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা দিনদিন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় যানবাহনে জ্বালানীর পরিবর্তে বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করা এখন প্রায় সকল দেশেরই মূল লক্ষ্য। তাই আগামীর বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার ধরতে ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাগুয়ার পরিকল্পনা করছে ২০২৫ সাল থেকে তারা শুধু বিদ্যুৎ-চালিত গাড়িই বিক্রি করবে। ভলভো বলছে, ২০৩০ সাল থেকে শুধু ইলেকট্রিক গাড়িই বিক্রি করবে এই জায়ান্ট গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এবং ব্রিটিশ স্পোর্টসকার নির্মাতা কোম্পানি লোটাস বলছে, তারাও ২০২৮ সাল থেকে বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন এবং বিপনন শুরু করবে। এছাড়া জেনারেল মোটর্স বলছে, তারা ২০৩৫ সাল নাগাদ শুধুই ইলেকট্রিক গাড়ি উৎপাদন করবে। আরেক জায়ান্ট গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি ফোর্ড বলছে, তারা ইউরোপে যত গাড়ি বিক্রি করে, ২০৩০ সালের মধ্যে তার সবই হবে বিদ্যুৎ-চালিত। ফোক্সওয়াগন বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের বিক্রীত গাড়ির ৭০ শতাংশই হবে ইলেকট্রিক বা বৈদ্যুতিক।
তো বুঝতেই পারছেন, আগামী বিশ্বে বৈদ্যুতিক গাড়ির কেমন চাহিদা হতে যাচ্ছে। যেহেতু, সৌর শক্তি ব্যবহার করে নবায়নযোগ্য শক্তি হিসেবে বৈদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব এবং এর দ্বারা পরিবেশ দূষণও হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই সীমিত তাই বলাই যায়, আগামীর বিশ্ব হতে চলেছে, বৈদ্যুতিক গাড়িরই বিশ্ব।
- বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির ভবিষ্যৎ-
পুরো পৃথিবীতেই বর্তমানে বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন, বিপণন এবং ব্যবহারের হিড়িক উঠেছে। এই বৈদ্যুতিক গাড়ির বিপ্লবের অংশহিসেবে বাংলাদেশও শুরু করেছে বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন। বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড চট্রগ্রামের মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে স্থাপন করতে যাচ্ছে ১০০ একর জায়গায় সুবিশাল বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির কারখানা। আসছে বছরই আশা করা যাচ্ছে দেশের রাস্তায় এই অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর উৎপাদিত গাড়ির দেখা মিলবে যা হবে সম্পন্ন বৈদ্যুতিক গাড়ি।
২০১৮ সাল থেকে শুরু হয়েছে এই কারখানার আবকাঠোমোগত উন্নয়নের কাজ। চীন, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইতালিকে অংশীদার করে আগামী বছরের শুরুতেই দেশের বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ি আনতে চায় বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ। স্কুল–কলেজের শিক্ষক, স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের কথা মাথায় রেখেই প্রথমে চার চাকার গাড়ি উৎপাদন করা হবে। মূলত মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তকে টার্গেট করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। গাড়ির দাম থাকবে ৭ থেকে ১৪ লাখ টাকার মধ্যে। কিস্তিতে থাকবে টাকা পরিশোধের সুযোগ। মহাসড়কে ব্যাটারিতে চার্জ দেওয়ার জন্য দেশে বিদ্যমান সিএনজি ও পেট্রলপাম্পের পাশে বসানো হবে চার্জিং ইউনিট। বাসায়ও ব্যাটারি চার্জ দেওয়া যাবে। তাই বৈদ্যুতিক গাড়ির যুগে প্রবেশ করতে আর দেরী নেই আমাদের প্রিয় স্বদেশ বাংলাদেশের।
- বৈদ্যুতিক গাড়ির জনপ্রিয়তার কারণ- বর্তমানে রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ বুঝতে পেরেছে জ্বালানী তেলের প্রয়োজনীয়তা এবং আগামীতে ভয়াবহ কোন যুদ্ধের কারণে যদি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় জ্বালানী তৈল উত্তোলন তবে পুরো পৃথিবীই তাই থমকে যাবে। তাই সংশ্লিষ্টরা জ্বালানী তেলের বিকল্প হিসেবে বৈদ্যুৎ শক্তির কথা ভাবছে। কেননা, সৌর শক্তি ব্যবহার করে খুব সহজেই নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করা সম্ভব যা সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব এবং বহুলাংশে নিরাপদ। তাছাড়া বৈদ্যুতিক গাড়ি অনেক বেশি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশ দূষণ, বায়ু দূষণ এবং শব্দ দূষণ থেকে সম্পন্ন মুক্ত বিধায় প্রায় সকল মানুষের কাছেই বৈদ্যুতিক গাড়ির গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ পৃথিবীর ব্যবহৃত প্রায় ৭০% যানবাহনই হবে বৈদ্যুতিক।
- একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে কেমন খরচ হতে পারে- একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে কেমন খরচ হতে পারে সেটা জানার আগে আপনাকে জানতে হবে বৈদ্যুতিক গাড়ির বৈদ্যুতিক চার্জ কখন বেশি ব্যবহৃত হবে এবং কিভাবে চার্জের অপচয় রোধ করা সম্ভব। যেমন- আপনি যদি এসি ব্যবহার করেন, তখন আপনার গাড়ির চার্জ বেশি খরচ হবে, আবার রাস্তা কতটা মসৃণ তার উপরও নির্ভর করবে চার্জের জীবনকাল। সে যাই হোক চলুন জেনে নেই একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে কেমন খরচ হতে পারে তার বিস্তারিত-
প্রতি কিলোওয়াটের জন্য সঠিক খরচ বের করতে হলে আপনার সর্বশেষ বিলের বিদ্যুতের সামগ্রিক খরচকে ব্যবহৃত কিলোওয়াট-ঘণ্টা দিয়ে ভাগ করতে হবে। আমেরিকার এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুসারে প্রতি কিলোওয়াট-ঘন্টার জন্য বিদ্যুৎ খরচ হয় প্রায় ১৩.৭৫ টাকার। বিদ্যুতের সাধারণ মূল্য অনুযায়ী চলুন টেসলার ‘ওয়াই’ মডেলের একটি বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জের খরচ হিসাব করে দেখি আমরা। টেসলার এই গাড়িটি ১০০ মাইল চলাচলে ২৮ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে। অর্থাৎ, প্রতি মাইলে ০.২৮ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ শক্তি খরচ করছে গাড়িটি। এখান থেকে আপনি প্রতি মাসে কত কিলোওয়াট শক্তি ব্যবহার করছেন, তার একটা হিসাব বের করা সম্ভব। প্রতি মাসে ১০০০ মাইলের জন্য আপনি ২৮০ কিলোওয়াট খরচ করছেন। এবার ২৮০ কিলোওয়াট ঘণ্টাকে ১৩.৭৫ দিয়ে গুণ করুন। দেখা যাবে আপনার গাড়ির মাসিক বিদ্যুৎ খরচ মাত্র ৩,৮৫০ (তিন হাজার আটশত পঞ্চাশ) টাকা। (যেখানে প্রতি ০১ ডলার সমান ১০০ টাকা ধরে হিসেব করা হয়েছে।)
এবার চিন্তা করে দেখুন, এক মাসে যদি আপনি ৩০০-৪০০ কিলোওয়াট বিদ্যুতও খরচ করেন তারপরও আপনি হাজার পাঁচাকের আশেপাশের টাকার খরচের মাধ্যমেই আপনার বৈদ্যুতিক গাড়ির জ্বালানীর খরচ বহন করতে পারছেন। তাই আগামী বিশ্বের কর্তৃত্বে থাকবে বৈদ্যুতিক গাড়ি সেটা আর বেশি দূরের চিত্র নয়।
তথ্যসূত্র-
১. বিবিসি নিউজ বাংলা
২. বিজনেস স্টান্ডার্ড বাংলা
৩. ইউকিপিডিয়া
৪. প্রথম আলো
বাংলা ওয়েব কনটেন্ট- ১০
সি প্রোগ্রামিং সম্পর্কে যে প্রাথমিক আলোচনাগুলো আপনার জানতেই হবে
সি প্রোগ্রামিং কী?
সি প্রোগ্রামিং হচ্ছে একটি ভাষা যা কম্পিউটার বুঝতে পারে এবং তাকে যে আদেশ দেয়া হয় সে অনুযায়ী কাজ করে। তাহলে বলা যায়, সি প্রোগ্রামিং হচ্ছে কম্পিউটারের ভাষা।
আচ্ছা, আরেকটু সহজ করে আলোচনা করি, ধরুণ আপনি আমি বাঙালি। আমাদেরকে যদি উর্দূতে বলা হয়, কেমন আছো? আমরা তখন কিছুই বুঝবো না। কিন্তু যদি বাংলায় এই সেইম কথাটাই বলা হয় আমরা তাহলে খুব সহজেই বুঝতে পারবো। এইযে, এতো সহজ একটা কথা অথচ আমরা উর্দূ না জানার কারণে বুঝলাম না। বাংলায় বলার সাথে সাথে বুঝে ফেল্লাম। কেন? কারণ আমরা বাংলা বুঝি, উর্দূ বুঝি না। ঠিক তেমনি, কম্পিউটার শুধুমাত্র সি প্রোগ্রামিং ভাষা বুঝতে পারে (অন্য আরও অনেক প্রোগ্রামিং ভাষাও বুঝতে পারে) তবে আমাদের মতো বাংলা, কিংবা ইংরেজি বুঝতে পারে না। তাই কম্পিউটারকে বুঝানোর জন্য সি প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করা হয়।
কম্পিউটারের সাথে সি প্রোগ্রামের প্রায়োগিক দিক-
আসলে অনেকেই হয়তো বলবে আমরা যখন, Shut down লিখি তখন তো কম্পিউটার অফ হয়ে যায় তাহলে কে বল্লো, কম্পিউটার ইংরেজি বুঝে না। আসলে কম্পিউটার যখন তৈরি করা হয় তখন তাকে সি প্রোগ্রামিং ভাষা দিয়ে বুঝানো হয় যে, Shut down লিখলে তুমি অফ হয়ে যাবে। আর এটাই হচ্ছে প্রোগ্রামিং এর ভাষা। অর্থাৎ যখন একটি অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা হয় তখন সেই অপারেটিং সিস্টেমটি হয় হাজার হাজার প্রোগ্রামিং ভাষার সমন্বয়। সেই প্রোগ্রামিং গুলো এমনভাবে সেট করা থাকে যেন, আপনি Shut down লিখলেই কম্পিউটার বুঝতে পারে যে, আপনি কম্পিউটারকে বলছেন আপনি আর কাজ করবেন না। এখন বন্ধ হয়ে যেতে। কম্পিউটারও সেটা বুঝে নিজের পাওয়ার কানেকশন থেকে ডিসকানেক্ট হয়ে যায় এবং বাকি সকল যন্ত্রকে সিগন্যাল পাঠায়, বন্ধ হয়ে যেতে এবং আস্তে করে কম্পিউটার বন্ধ হয়ে যায়।
একটি সি প্রোগ্রামিং এর উদাহরণ-
আচ্ছা, এখন একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করা যাক। সি প্রোগ্রামিং ভাষার সবচেয়ে সহজ এবং জনপ্রিয় উদাহরণ : Hello World হল একটি সাধারণ প্রোগ্রামিং কোড যা সকল প্রোগ্রামার প্রোগ্রামিং কোড লিখার প্রথমেই শুরু করে থাকে। আমাদের ইন্টারমিডিয়েটের আইসিটি বইয়েও এমন কোড ছিল সবার প্রথমে।
এই কোডের অংশটুকুতে “main()” নামের ফাংশন লোড হলে একটি লাইনে Hello World লেখা দেখাবে:
main()
{
printf(“Hello World\n“);
}
সি প্রোগ্রামিং কোডের আদর্শ উদাহরণ
#include <stdio.h>
int main(void)
{
print(“Hello World\n“);
return 0;
}
- এখানে#include <stdio.h> লিখার মাধ্যমে কম্পেইলার কেh নামের হেডার ফাইল পড়তে বলা হয়েছে ।
- int main(void) মানেমূল ফাংশন ইন্টেজার (গাণিতিক পূর্ণ সংখ্যা) প্রদান করবে । আর (void) লিখার কারণে মূল ফাংশনে কোন কিছু ইনপুট করতে হবে না ।
- printf(“Hello World\n”) এখানেprintf হল একটি ফাংশন যার বিস্তারিতh হেডার ফাইলের মধ্যে লিখা আছে । সাধারণত printf এর মাধ্যমে স্ট্রিং উপাত্ত কম্পিউটারের পর্দায় দৃশ্যমান করার জন্য ব্যবহার হয় । এর মানে Hello World লিখাটি কম্পিউটারের পর্দায় দৃশ্যমান হবে।
দেখেন, এখানে ছোট্ট একটা প্রোগ্রামিং কোড টাইপ করার মাধ্যমে কি সুন্দর একটা লেখা কম্পিউটারে দৃশ্যমান হয়ে গেলো। ঠিক এভাবেই আমাদের কম্পিউটারে যত লেখা দেখতে পাই। যত ধরণের কী দেখতে পাই এবং এগুলোর কাজও এভাবে কোডিং করে আগে থেকে কম্পিউটারে কোড জেনারেট করা থাকে। ফলে আমরা যখন কম্পিউটারকে ইংরেজি লেখা ক্লিক করে কমান্ড দেই। তখন কম্পিউটারের কাছে সেটা সি প্রোগ্রামিং কমান্ড হিসেবে যায় এবং কম্পিউটার তখন বুঝতে পারে তার এই মুহুর্তে কী করতে হবে।
প্রাথমিক কী ওয়ার্ডসমূহ-
সি প্রোগ্রামিং ভাষায় কীওয়ার্ড বলতে বোঝায় সেইসব সংরক্ষিত শব্দসমূহকে যেগুলো একটি বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে। সি৮৯ এ এরকম ৩২টি কীওয়ার্ড রয়েছে। যেগুলো আপনি না জানলে কোডিং এর শুরুই করতে পারবেন না। অর্থাৎ আপনাকে কোড জানতে হলে সবার প্রথমে এই কোডগুলো মুখস্থ করে নিতে হবে বা এদের কোনটার কি কাজ জেনে নিতে হবে। চলুন তাহলে জেনে নেই কোডগুলো-
auto
break case char const continue default do |
double
else enum float for goto if |
int
long register return short signed sizeof |
struct
switch typedef union unsigned void volatile while |
এছাড়াও সি৯৯ এ এরকম আরো পাঁচটি কীওয়ার্ড যুক্ত হয়। সেগুলো হলো-
_Bool
_Complex |
_Imaginary
inline |
restrict |
সি১১ তে যুক্ত হয় আরো সাতটি কীওয়ার্ড। সেগুলো হলো-
_Alignas
_Alignof |
_Atomic
_Generic |
_Noreturn
_Static_assert |
_Thread_local |
সি এর অপারেটরসমূহ হলো –
- অ্যারিথমেটিক: +, –, *, /, %
- অ্যাসাইনমেন্ট: =
- অগমেন্টেডঅ্যাসাইনমেন্ট: +=, -=, *=, /=, %=, &=, |=, ^=, <<=, >>=
- বিটওয়াইজলজিক: ~, &, |, ^
- বিটওয়াইজশিফট্: <<, >>
- বুলিয়ানলজিক: !, &&, ||
- কন্ডিশনালইভালুয়েশন: ? :
- ইকুয়ালিটিটেস্টিং: ==, !=
- কলিংফাংশন: ( )
- ইনক্রিমেন্টও ডিক্রিমেন্ট অপারেটর: ++, —
- মেম্বারসিলেকশন: ., ->
- অবজেক্টসাইজ: sizeof
- অর্ডাররিলেশন: <, <=, >, >=
- রেফারেন্সও ডিরেফারেন্স: &, *, [ ]
- সিকুয়েন্সিং: ,
- সাবএক্সপ্রেসনগ্রুপিং: ( )
- টাইপকনভার্সন: (typename)
সি প্রোগ্রামিং এর ইতিহাস-
১৯৭৮ সালে সি প্রোগ্রামিং এর প্রথম বই “The C Programming Language” প্রকাশিত হয়েছিল। বইটির প্রথম সংস্করণ প্রোগ্রামারদের কাছে অনেক বছর যাবৎ ভাষাটির সাধারণ বর্ণনা সর্বরাহ করেছিল। ব্রায়ান কার্নিংহাম এবং ডেনিশ রিচি কর্তৃক লেখা এই বইটি “K&R” নামে অনেক জনপ্রিয়। সি ল্যাঙ্গুয়েজ কয়েক বছরের মধ্যেই দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাষাটির জন্য কিছু নিয়ম(standard) ঠিক করে দেওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল। পরবর্তীতে নতুন প্রোগ্রামারদের জন্য নিম্নের সংস্করণগুলোর সংযোজন করা হয়।
C89: ১৯৮৯ সালে আমেরিকান ন্যাশন্যাল স্টান্ডার্ড ইন্সটিটিউট(ANSI) কর্তৃক সি এর প্রথম স্টান্ডার্ড প্রকাশিত হয়েছিল। সি এর এই ভার্সনটি প্রোগ্রামারদের কাছে C89 নামে জনপ্রিয় ছিল।
C99: ১৯৯৯ সালে সি স্টান্ডার্ডে আরো নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য যেমন- নতুন ইনলাইন ফাংশন, নতুন ডাটাটাইপ ইত্যাদি সংযুক্ত করা হয়েছিল। ইহা প্রোগ্রামারদের কাছে C99 নামে পরিচিত ছিল।
C11: C11 এ নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য যেমন- টাইপ জেনেরিক ম্যাক্রো,অটোমিক অপারেশন এবং এনোনিমাস স্ট্রাকচার যোগ করা হয়েছে যেগুলো C99 এ ছিল না।
এই সবগুলো স্টান্ডার্ড আনসি সি নামেও পরিচিত।
আপনি যদি প্রোগ্রামিং এ আগ্রহী হন এবং আপনার যদি কোডিং করতে খুব ভালো লাগে তবে সি প্রোগ্রামিং হচ্ছে আপনার জন্য বিগেনিং ল্যাঙ্গুয়েজ । সি প্রোগ্রামিং এর মতো এতো সহজ প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ আর দ্বিতীয়টি নেই। তাই যারা ডিজিটাল মার্কেটিং কিংবা প্রোগ্রামিং রিলেটেড সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাদের জন্য সি প্রোগ্রামিং শেখা যেহেতু খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেহেতু, আপনিও তাদের দলে হলে সি প্রোগ্রামিং কোডিং শুরু হোক আজ থেকেই।
তথ্যসূত্র-
- Kernighan, Brian W; Ritchie, Dennis M. (ফেব্রুয়ারি ১৯৭৮)। দ্যা সি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ (The C Programming Language) (১ম সংস্করণ)। Englewood Cliffs, NJ:
- ↑“History of C”।cppreference.com। মে ২৯, ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ২৮, ২০১৮।
- ↑ ঝাঁপদিন:ক খ গ Ritchie, Dennis M. (মার্চ ১৯৯৩)। “The Development of the C Language”। ACM SIGPLAN Notices। ACM। 28 (3): 201–208।
- ↑Ritchie, Dennis। “BCPL to B to C”। ডিসেম্বর ১২, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৯।
- ↑ ঝাঁপদিন:ক খ গ Jensen, Richard (৯ ডিসেম্বর ২০২০)। “”A damn stupid thing to do”—the origins of C”। Ars Technica (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২–০৩–২৮।